শহীদ মিনার ভাঙায় দুই শিক্ষার্থীর শাস্তি প্রতিদিন স্কুলের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার
Published: 24th, February 2025 GMT
স্কুল প্রাঙ্গণে কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই প্রতি বছর কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এ বছরও কলা গাছের তৈরি শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওই প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষার্থী অনেকটা ফিল্ম স্টাইলে লাথি মেরে শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে। এই দৃশ্য আবার ভিডিও করে নিজেরাই গত রোববার ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ভাইরাল হলে নেটিজেনরা তার নিন্দা জানায়।
এ অবস্থায় সোমবার বিকেলে গাজীপুর মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক ও দুই শিক্ষার্থীকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার কার্যালয়ে ডেকে নেন।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ সমকালকে বলেন, কিছু না বুঝেই দুই শিক্ষার্থী লাথি মেরে শহীদ মিনার ভেঙে নিজেদের ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে বলে তাকে জানিয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা অনুতপ্ত। ক্ষমাও চেয়েছে।
ইউএনও বলেন, তাদের শাস্তি হিসেবে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের সব শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যতদিন তারা এ স্কুলে আছে ততদিন সব কক্ষ পরিষ্কার করবে ওই দুই শিক্ষার্থী।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরা দুই শিক্ষার্থী মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এক পর্যায়ে তারা দুজন মিলে একসঙ্গে দৌড়ে এসে অস্থায়ীভাবে কলা গাছের তৈরি শহীদ মিনারে লাথি দিতে থাকে। কয়েক দফা লাথি দেয় তারা। আঘাতে শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো হেলে পড়ে। এই দৃশ্য পাশ থেকে মোবাইল ফোনে ধারণ করে একই স্কুলের অপর শিক্ষার্থী। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখছে বেশ কয়েকজন ছাত্রী।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী বলে, আমি বুঝতে পারিনি। না বুঝে কাজটি করে ফেলেছি। ভুল হয়ে গেছে।
স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা শফিকুল ইসলাম জনী বলেন, আমরা এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছি। বাঙালির আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। আমরা ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছি। তিন কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ইউএনও ইতোমধ্যে তাদের শাস্তি দিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী
অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।
গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।
আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগেগতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।
ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’
সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।
আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে