বাংলাদেশে শতাধিক অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জুয়া খেলেন। ২০২০ সালের চেয়ে ২০২৬ সালে বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার বাজার বাড়তে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপ বন্ধে কার্যকর আইনি উদ্যোগ না থাকায় আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছেন লাখ লাখ তরুণ-তরুণী। আর তাই অনলাইনে জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে বিরত রাখতে তরুণ-তরুণীদের সচেতন করতে হবে। গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে জাগো ফাউন্ডেশন ও টিকটকের উদ্যোগে আয়োজিত ‘যুব সমাজ ও অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব তথ্য জানানো হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইটি) অধ্যাপক শামীম আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার যেমন তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি সাইবার অপরাধের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।’

জাগো ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক তানভীর চৌধুরী বলেন, ‘তরুণ-তরুণীরা যেন অনলাইনে নিরাপদ থাকতে পারেন এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন, সে জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আজকের সংলাপে যে মতামত ও সুপারিশ ওঠে এসেছে, তা ভবিষ্যৎ কার্যক্রমকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত করতে সহায়ক হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজ‌অর্ডারস বিভাগের ডিজিটাল স্ক্রিন ও আসক্তি বিষয়ে এমফিল গবেষক জাহিদ হোসাইন খান বলেন, অনলাইন জুয়ায় তরুণদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। আর তাই দেশের অনলাইন জুয়ার বাজার কয়েক হাজার কোটি টাকার অঙ্কে পৌঁছে গেছে। এই টাকা অবৈধ পথে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। শহর ও প্রত্যন্ত গ্রামে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটে অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে। এ ধরনের প্রতারণার সব তথ্য সরকারের কাছে নেই। অনলাইন জুয়া বন্ধে আইনি কাঠামো এখনো তেমন কার্যকর নয়। তরুণদের সচেতনতার অভাবে অনলাইন জুয়ার সাইটে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

সংলাপে জানানো হয়, তরুণদের সচেতন করতে জাগো ফাউন্ডেশন ও টিকটক সারা দেশে সাবধানে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই মধ্যে প্রায় এক লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে অনলাইনে নিরাপদ থাকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কমলার বইয়ে ‘পর্দার অন্তরালের গল্প’

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছেন সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। স্মৃতিচারণামূলক বইটির তিনি নাম দিয়েছেন ‘হান্ড্রেড অ্যান্ড সেভেন ডেজ’ বা ‘১০৭ দিন’। বইটিতে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘পর্দার অন্তরালের গল্প খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন’ কমলা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার কমলা হ্যারিস নিজেই নতুন বইয়ের কথা জানান। বইটির প্রকাশক বিশ্বখ্যাত মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা সাইমন অ্যান্ড শুস্টার। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বইটি বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস।

বইটি হাতে নিয়ে করা একটি ভিডিও বার্তা নিজের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন কমলা হ্যারিস। সেখানে বলেন, ‘মাত্র এক বছরের কিছুটা বেশি সময় আগে আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলাম। ১০৭ দিন আমি পুরো দেশ ভ্রমণ করি। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত নির্বাচনী প্রচার ছিল এটি।’

কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ও একমাত্র নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যান তিনি। এরপর জনপরিসরে কার্যত তাঁকে তেমন একটা দেখা যায়নি। এর মধ্যে কমলা এই বইয়ের ঘোষণা দিলেন।

অনেকটা নাটকীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আবারও ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৮২ বছর বয়সী বাইডেনের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা এর সমালোচনা শুরু করেন। এর মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে প্রার্থী হন কমলা।

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক মার্কিন সিনেটর কমলা ভিডিও বার্তায় জানান, নির্বাচন নিয়ে বইটিতে ‘খোলামেলাভাবে’ লিখেছেন তিনি। আরও বলেছেন, বইটি পড়লে বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের ‘পর্দার অন্তরালের অনেক বিষয়’ সম্পর্কে জানতে পারবেন পাঠকেরা।

কমলা হ্যারিস তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রচার নিয়ে বিশ্ব যা দেখেছে, সেটা ছিল কেবল গল্পের একটি অংশ মাত্র। এই বই আমাদের সেই নির্বাচনী লড়াই ফিরে দেখা নিয়ে নয়। আমার সেই সময়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার খোলামেলা বিবরণ তুলে ধরেছি এখানে। আমি বিশ্বাস করি, আমি সেই সময় যা দেখেছি, যা শিখেছি ও সামনে এগিয়ে যেতে যা প্রয়োজন সেসব অন্য সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটা মূল্য রয়েছে। এই বইটি লেখার সময় আমার মনে একটি সত্য বারবার ফিরে এসেছে। আর সেই সত্যটা হলো—কখনো কখনো লড়াইয়ের জন্য সময় প্রয়োজন।’

বইয়ের আগে আরও একটি ঘোষণা দেন কমলা। গত বুধবার তিনি জানান, আগামী বছর ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০২৮–এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের আবার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ‘উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ