দেশে অনলাইন জুয়ার বাজার বড় হচ্ছে, নেই আইনি পদক্ষেপ
Published: 25th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে শতাধিক অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জুয়া খেলেন। ২০২০ সালের চেয়ে ২০২৬ সালে বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার বাজার বাড়তে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপ বন্ধে কার্যকর আইনি উদ্যোগ না থাকায় আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছেন লাখ লাখ তরুণ-তরুণী। আর তাই অনলাইনে জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে বিরত রাখতে তরুণ-তরুণীদের সচেতন করতে হবে। গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে জাগো ফাউন্ডেশন ও টিকটকের উদ্যোগে আয়োজিত ‘যুব সমাজ ও অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব তথ্য জানানো হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইটি) অধ্যাপক শামীম আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার যেমন তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি সাইবার অপরাধের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।’
জাগো ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক তানভীর চৌধুরী বলেন, ‘তরুণ-তরুণীরা যেন অনলাইনে নিরাপদ থাকতে পারেন এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন, সে জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আজকের সংলাপে যে মতামত ও সুপারিশ ওঠে এসেছে, তা ভবিষ্যৎ কার্যক্রমকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত করতে সহায়ক হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের ডিজিটাল স্ক্রিন ও আসক্তি বিষয়ে এমফিল গবেষক জাহিদ হোসাইন খান বলেন, অনলাইন জুয়ায় তরুণদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। আর তাই দেশের অনলাইন জুয়ার বাজার কয়েক হাজার কোটি টাকার অঙ্কে পৌঁছে গেছে। এই টাকা অবৈধ পথে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। শহর ও প্রত্যন্ত গ্রামে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটে অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে। এ ধরনের প্রতারণার সব তথ্য সরকারের কাছে নেই। অনলাইন জুয়া বন্ধে আইনি কাঠামো এখনো তেমন কার্যকর নয়। তরুণদের সচেতনতার অভাবে অনলাইন জুয়ার সাইটে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
সংলাপে জানানো হয়, তরুণদের সচেতন করতে জাগো ফাউন্ডেশন ও টিকটক সারা দেশে সাবধানে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই মধ্যে প্রায় এক লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে অনলাইনে নিরাপদ থাকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল