গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক সামগ্রীর প্রস্তুতকারী বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের নতুন কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে গত সোমবার থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) এই কারখানা অবস্থিত।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ নতুন কারখানায় উৎপাদন শুরুর তথ্য গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে। কোম্পানিটি জানায়, নতুন কারখানাটায় হোম অ্যাপ্লায়েন্স বা গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য নানা সামগ্রী উৎপাদিত হবে। এটি পরিবেশবান্ধব কারখানা হিসেবে লিড গোল্ড সনদপ্রাপ্ত।

কোম্পানির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন কারখানায় টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) উপাদিত হবে। এ কারখানা তৈরিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৯৩৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর নতুন কারখানাটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। সেই হিসাবে উদ্বোধনের প্রায় আড়াই বছর পর এতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলো। এত দিন কোম্পানিটি সাভারের দুটি কারখানায় পণ্য উৎপাদিত করত।

জানা গেছে, নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য ২০২২ সালে সিঙ্গার ৩৪ একর জায়গা ইজারা নেয়। কারখানাটি পুরোদমে চালু হলে তাতে চার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। আপাতত দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৯ সালের আগে সিঙ্গার বাংলাদেশের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি। ২০১৯ সালে সেই কোম্পানির কাছ থেকে সিঙ্গার বাংলাদেশের মালিকানা কিনে নেয় তুরস্কভিত্তিক কোম্পানি আর্চেলিক। এটি তুরস্কের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প গ্রুপ কচ হোল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি। বিশ্বের ৫২টি দেশে ১২টি ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করে আর্চেলিক।

সিঙ্গারের নতুন কারখানায় বছরে বিভিন্ন ধরনের ১৫ লাখের বেশি ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদিত হবে। এসব পণ্য প্রথমে দেশেই বাজারজাত করা হবে। এরপর সুযোগ থাকলে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হওয়া সিঙ্গারের সামগ্রীর ৯০ শতাংশই এই কারখানায় উৎপাদিত হবে বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। কোম্পানিটির পণ্য তালিকায় রয়েছে রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, এসি, ওয়াশিং মেশিন, সেলাই মেশিন, ওভেনসহ গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য নানা ইলেকট্রনিক সামগ্রী।

একনজরে সিঙ্গার বাংলাদেশ
✧ ১২০ বছরের পুরোনো কোম্পানি, যাত্রা শুরু ১৯০৫ সালে।  
✧১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম কারখানা স্থাপন।
✧ ১৯২০ সালে প্রথম ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি বিক্রয়কেন্দ্র চালু।
✧দেশজুড়ে নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র প্রায় ৪৫০টি।
✧ পণ্য তালিকায় রয়েছে রেফ্রিজারেটর, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, সেলাই মেশিন, ওভেনসহ গৃহস্থালি নানা ইলেকট্রনিক সামগ্রী
✧ গত বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে ১,৫৪৬ কোটি টাকার ব্যবসা।
✧ ২০২৩ সালে মুনাফা করেছিল ৫২ কোটি টাকার বেশি।

গত বছরের জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর ৯ মাসে কোম্পানিটি ১ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের ১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকার চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বা ১২০ কোটি টাকা বেশি। তবে আগের বছরের চেয়ে ব্যবসা বাড়লেও মুনাফা কমেছে।

সেলাই মেশিন বিক্রির মধ্য দিয়ে ১৯০৫ সালে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে সিঙ্গার। সেই হিসাবে এটি দেশে ১২০ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান। সারা দেশে কোম্পানিটির ৪৪৬টি নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র ও ৯০০টি পরিবেশক কেন্দ্র রয়েছে। ১৯২০ সালে কোম্পানিটি প্রথম ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে। ১৯৭৯ সালে এসে এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। এটি ১৯৮৩ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ও ২০০১ সালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত হয়।

কোম্পানিটি বাংলাদেশে প্রথম কারখানা চালু করে ১৯৯৩ সালে, সেটি ছিল টেলিভিশন তৈরির কারখানা। এরপর ১৯৯৬ সালে ওয়াশিং মেশিন তৈরির কারখানা স্থাপন করে। আর ১৯৯৮ সালে কোম্পানিটির সমন্বিত কারখানার যাত্রা শুরু হয়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গারের ৫৭ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে প্রায় ২৯ শতাংশ শেয়ার। আর ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ শেয়ারধারীদের হাতে। বাকি ১ শতাংশ শেয়ার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

এদিকে নতুন কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর খবরে গতকাল মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ২ টাকা ৭০ পয়সা বা প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭ টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ক রয়ক ন দ র উৎপ দ ত বছর র প রথম ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • গোলাম রাব্বানীর ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ঘোষণার সুপারিশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর