বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত নতুন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিক্ষোভ, হাতাহাতি এবং পরে অন্তত দুই দফা মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও নতুন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন সংগঠনের শীর্ষ পদ নিয়ে বিরোধের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন ছাত্রসংগঠনের কমিটিতে তাঁদের ‘সঠিক প্রতিনিধিত্ব’ চান। তাঁরা বলছিলেন, কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদকে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার দাবি করছিলেন। রিফাত রশীদকে নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব করা হয়েছে।

আজ বিকেল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণার কথা ছিল।

এই কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা যথাসময়ে ক্যানটিনের সামনে এসে অপেক্ষা করছিলেন। মধুর ক্যানটিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনের জন্য চেয়ার-টেবিলও আগেই পাতা হয়েছিল। কিন্তু নতুন ছাত্রসংগঠনের মূল উদ্যোক্তারা নির্ধারিত সময়ে সেখানে যাননি। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে অবস্থান করছিলেন৷

এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিকেল চারটার কিছু পরে মধুর ক্যানটিনের সামনে যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা ‘উত্তরাতে বৈষম্য, চলবে না চলবে না’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আমাদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ঢাবির সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদের পক্ষেও স্লোগান দেন—‘রিফাত রশীদ ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘রিফাত রশীদ এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আজ বুধবার বিকেলে নতুন ছাত্রসংগঠনের কমিটি ঘোষণার সময় শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ