এটি কবি হাসান রনির কবিতার প্রথম বই। বইয়ের শুরুতেই কবিতাটির নাম ‘ফেরার মরশুম’। অমূল্য এই কবিতাটি বেশ আগে থেকেই আমার প্রিয় এবং আমার ব্যক্তিগত ক্ল্যাসিক কবিতার লিস্টে থাকে এই কবিতা।

পরবর্তী অমূল্য কবিতাটি ‘নীলনদের রচয়িতা’য় কত কথা কবির!  

‘মাড়াই শেষে খুরের ফাঁক দিয়ে/ধেয়ে আসা ত্রিকোণ আলো/বিনির্মাণ করো আমায় খড়ের মতো/আর ফেলে রাখো গোয়ালঘরের পেছনে/আমার জন্য অপেক্ষায় স্ফীতবক্ষের অবাধ্য পাখিরা।’

এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয় বইটি পাঠে। একটিও খারাপ কবিতা নেই, নেই বাহুল্য। মনে হয় স্বকীয়তা নিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠছে যেন কবিতাগুলো নিগূঢ় এক লক্ষ্য নিয়ে। 

‘বহু পাখি বসে তাদের ডানার সমান জায়গা নিয়ে/ঘুমের ধ্যানে মটরের মতো আলগা করে বুক/এ সমুদ্র অভিজ্ঞতা তবু নীল ভাঙে/ছায়া হয়ে চলে যায় পথ।’

প্রায় প্রতিটি কবিতায় এমন অদ্ভুত সুন্দর হয়ে ওঠা ভিন্ন ভিন্ন মুহূর্ত পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত মূল্যায়নে পুরো বইয়ে একটি কবিতা একদিকে, বাকি ৩৭টি কবিতা আরেকদিকে। আসুন ফেরার মরশুম থেকে পাঠ করি।

‘আমাকে নিচ্ছ না কেন?/তলপেটে-পোড়া ট্রেন, যাবার দৃশ্যে টানেলে/ভয়ে সেও কাঁপে/যেন ফায়ার স্পেসে ঢোকা মৃতের মুখ।’

কোনো কবিতায় কবিত্ব দেখানোর বাহাদুরি নেই, নেই নিজের ব্যক্তিত্বকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করার মেকি চেষ্টা। স্রেফ কবিতা। কবিতার সঙ্গেই যেন সন্ধি কবির।

কবিতাগুলোকে না বলা যায় কেবল অস্তিত্ববাদী, না বলা যায় কেবল স্যুরিয়েল, না বলা যায় এ কেবল দৃশ্য হয়ে ওঠা কবিতা! আবেগে মথিতও না, যুক্তিতে শানিতও না, ছন্দের বাহাদুরিও নেই। কবিতাগুলো যেন দাঁড়িয়ে আছে এক ভিন্ন সত্যের বিকেলের সঙ্গে মিশে থাকার মতো করে। সহজ-সরলও নয়, আবার কঠিনও নয়। এই যেমন দেখুন: কী বলব একে? 

‘আমি কি সে-ই যে বিঁধে আছে মাছের মতো?/তার ঠোঁট শুধু ভেতরে টানে/ওপরে আলোখেলা আমারই মতো যে খোঁজে গহিন/যেখানে মৃত্যু কিছুটা ভান করে,/হরিণের চোখে আঁকা হয়ে যায় বাঘের মুখ।’

আবার এই দেখুন.

..‘আমার গোরস্তানের ভিতর জমে থাকা আলো/যেন কোথাও শিশুরা ভরছে তার হাত জামার ভেতরে।’

একটা লিমিট রেখে দেওয়া ভাষায়। শব্দ চয়নে, দেখার পরিসরে, বিস্তৃত ব্যাপকতায় না গিয়ে একটা সীমানার দাগ কেটে দিয়ে সেখানেই কবিতাগুলো নিয়ে হ্যাপিলি পাহাড়ের চূড়ায় যাচ্ছেন কবি। তাই ফেরার মরশুম পছন্দের বই হয়েই থাকবে, পুনরায় ফিরে ফিরে আসতে হবে এ বইয়ে আরও গভীরভাবে অনুভব করতে এর প্রত্যঙ্গসমূহকে। 

‘আমি বেচেছি আমার কন্যার হৃদয়;/এমন দিনে চার ডানার পুরুষ বাহক বয়ে নিয়ে গেছে তাকে/জ্যান্ত পুরুষ শরীরে সারাটা দিন দিয়ে গেছে মহড়া।/শব্দরা আসে না, এ হরিয়াল/পাখির মাংসল পায়ের দিকেই আমার চোখ পড়ে/মানুষের মুখে ফণা তোলা কান দুটো-/পুকুরের পাড়ে মাটির স্তূপে আটকে থাকা মরা পুতুলের মুখ/সেও জেগেছিল মৃত্যুর ক্রূরতা নিয়ে।’

আহা রে! হৃদয়টা কোমল হয়ে চুপসে পড়ে নিথর হয়ে যায় এখানে। বাবা তার আদরের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন অশ্রু আড়াল করে মেয়ের অগাধ সুখের আশায়; যা বাবাদের রাজকন্যাদের জন্য বরাবরই কাম্য। এখানে চার ডানার পুরুষ বাহক আমি নিয়েছি পালকি হিসেবে। বাবা কন্যা সম্প্রদান করেছেন। কিন্তু তাই কি আসলে? না, পরে উপলব্ধি হয়, অনুতাপে দগ্ধ হচ্ছেন; আদতে বেচে দিয়েছেন যে কন্যার হৃদয়! তাই তো আদরের এই সোনার টুকরোকে তার যৌনলিপ্সু জীবনসঙ্গী ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছে; সঙ্গমে। আহা কোমল হৃদয়টা তখন কন্যার! কত যে কটু কথা শুনে গেছে শ্বশুরবাড়িতে আদরের কন্যা। ধরে নিয়েছি বাল্য বয়সে বিয়ে হওয়া কন্যার মৃতদেহ (যে ছিল পুতুলের মতো সুন্দর); মুখ বুজে অপমান দেহে ও মনে সহ্য করে যাওয়া মেয়েটা লাশ হয়ে আছে কাদায় পুকুরের ধারে এবং মৃত্যুর আগে কন্যার যে জীবন ছিল বাবার আকাশভর্তি হৃদয় নিয়ে সে জীবন পেরিয়ে ক্রূর সময়ের ভেতর শ্বশুরবাড়ির অচেনা জগতে কতটা ভীত হয়ে ছিল সে! ভাবা যায় কতটা শক্তি কবিতার এখানে, মাত্র এই কয়েকটা পঙ্‌ক্তিতে!

শেষ করি এই বইয়ের আমার প্রিয় কবিতা থেকে কয়েকটি পঙ্‌ক্তি দিয়ে। এখানে কোনো ব্যাখ্যায় না গিয়ে চুপ হয়ে থাকি চলুন। অনুভব করি কবির হৃদয় যেখান থেকে সুতো হয়ে, ঘুড়ি হয়ে চলে এলো পাঠকের হৃদয়ে– ফেরার মরশুম। 

‘ফেরার মরশুমে বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকে জাহাজগুলো/মাছেরা পা লাগিয়ে পাথরে পাথরে দেয় লাফ/সঞ্জীবনী সুধা কোন্,/খোঁজে আমাকে পিতলের মৌমাছি/বিস্মরণের ধনুক শরীর কালও ধরা ছিল গদ্যের জীবন-/পেটমোটা নৌকার মতো করে বাতাসের কণ্ঠে।’

‘ফেরার মরশুম’ ২০২৫ বইমেলার সার্থক এক প্রকাশ। প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে। বইমেলায় ঐতিহ্য প্রকাশনীর ২৮ নম্বর প্যাভিলিয়নে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

ফেরার মরশুম।।  হাসান রনি।। কবিতা।।  প্রকাশক : ঐতিহ্য।। প্রচ্ছদ : নাওয়াজ মারজান ।।

পৃষ্ঠা : ৪৮ ।। মূল্য : ১৫০ টাকা

মাহফুজুর রহমান সজীব : কবি ও ব্যাংক কর্মকর্তা

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন: বিএনপির যে প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের যেসব আসনে নির্বাচন করার কথা রয়েছে, সেখানেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আরো পড়ুন:

বিএনপির প্রার্থী তালিকায় নেই তারকারা

কুষ্টিয়ায় মনোনয়নবঞ্চিত সোহরাব- সমর্থকদের বিক্ষোভ

বিএনপির ঘোষিত আসনভিত্তিক তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা-১১ (বাড্ডা-ভাটারা-রামপুরা) আসনের তাদের প্রার্থী এম এ কাইয়ুম। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।

রংপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ এনামুল হক ভরসা। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ নওশাদ জমির। এই আসনে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের।

কুমিল্লা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

চাঁদপুর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে মো. মমিনুল হককে। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের দলের আসনভিত্তিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। যখন চূড়ান্ত করা হবে, আপনাদের জানানো হবে।”

এর আগে রবিবার (৩ নভেম্বর) সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ৩০০ আসন ধরে এগোচ্ছি। ঢাকা থেকেই আমি দাঁড়াব। আর কে কোন আসনে দাঁড়াবেন, আমরা প্রার্থী তালিকা এ মাসেই দিতে পারি।”

অবশ্য বিএনপি ও এনসিপি চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত যে কোনো আসনে যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে বলে তারা ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। 

ঢাকা/রায়হান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ