দরিদ্র নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান
Published: 27th, February 2025 GMT
দরিদ্র নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণ পেলে দারিদ্র্যকে জয় করতে পারেন শহরের প্রান্তিক নারীরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিএনপিএসের ঢাকা পূর্ব কেন্দ্রে নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাবিতে সেমিনার
ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি
নাইট কোচে উঠতে নারীদের ভয়
বিএনপিএসের ঢাকা পূর্ব কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শেলীনা পারভীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ফাতেমা আক্তার ডলি, যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাজিয়া রহমান, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মো, আব্দুর রশিদ, উন্নয়ন কর্মকর্তা অনিকেত আচার্য প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব ও নারীর ক্ষমতায়নের সাথে ছোট পরিসরে হলেও নারীদের আয়মূলক কাজে অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করেন।
তারা অংশগ্রহণকারী নারীদের আয়মূলক কাজ, তার পরিসর, বৈশিষ্ট্য, পরিচালনার কৌশল, লাভ-ক্ষতি নির্ধারণ, ঝুঁকি ও তা মোকাবিলায় করণীয় এবং আয়মূলক কাজের পরিকল্পনা তৈরির পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের পরিবারের আগ্রহী যুব বয়সী নারী-পুরুষ সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে সরকারের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং অন্যান্য সংস্থা হতে বিভিন্ন ধরনের আয়মূলক কাজ শেখার সুযোগ করে দেওয়া আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী নারী সদস্যদের আয়মূলক কাজ পুণরায় শুরু করার জন্য সংস্থার পক্ষ হতে অনুদান হিসেবে দ্রব্যসামগ্রী দেওয়া হয়।
এ সময় অংশগ্রহণকারীরা সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, অনুদান হিসেবে প্রাপ্ত এই দ্রব্যসামগ্রীর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে তাদের পরিবারে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা ফিরবে।
ঢাকা/এএএম/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।
কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।
জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।
২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।
চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।