সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার সময় আরও বাড়ল
Published: 2nd, March 2025 GMT
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ফের বাড়ল। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আদালত। এই নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ১১৭ বার বাড়ানো হলো।
রোববার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম সময় বাড়ানোর আদেশ দেন। ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর অপর এক আদালত পিবিআইকে আজকের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিল।
গত ৮ জানুয়ারি ঢাকার আরেকটি আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মশিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ১২ বছর ধরে অমীমাংসিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে র্যাবের ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের বেঞ্চ বলেন, দীর্ঘদিনেও তদন্ত শেষ না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এতে শুধু সাগর রুনির পরিবার নয়, পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটির তদন্ত কাজ র্যাবের কাছ থেকে নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সে হস্তান্তর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এই টাস্কফোর্সকে তদন্ত শেষ করে ছয় মাসের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৬ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছেন। এর আগে, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সরকার ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিলের হাইকোর্টের দেওয়া একটি আদেশ সংশোধনের জন্য একটি আবেদন করে, যেখানে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা থেকে মামলাটি র্যাবকে দেওয়া হয়েছিল।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ নভেম্বর পিবিআই এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয়। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকার আরেকটি আদালত পিবিআইকে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙ্গার বার্তা সম্পাদক সাগর এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় খুন হন। ঘটনার সময় এই দম্পতির পাঁচ বছরের একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ বাসাতেই ছিল। রুনির ভাই নওশের আলী রোমান পরদিন শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স গর র ন গত বছর র র তদন ত র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।