কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে একাই দাঁড়ালেন সাইফুল
Published: 2nd, March 2025 GMT
বুকে ও পিঠে ফেস্টুন ঝুলিয়ে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক তরুণ। এতে লেখা কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সচেতনতার বার্তা। জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে একইভাবে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। সবাই থেমে থেমে শুনছেন তাঁর কথা। তিনি পঞ্চগড়ের তরুণ সাইফুল ইসলাম শান্ত।
কিশোর অপরাধ নিয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়া তরুণ সাইফুল পঞ্চগড়ের আমলাহার গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে। ঘুষ, দুর্নীতি, কুসংস্কার, প্রশ্নফাঁসসহ সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে একা মানববন্ধন করেছেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে এবার সিরাজগঞ্জে সচেতনতার বার্তা দিলেন তিনি। গতকাল রোববার সাইফুল কিশোর গ্যাং সেজে পথচারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি নিজে একজন (প্রতীকী) কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিলাম। আমাদের কার্যকলাপ সমাজের জন্য ক্ষতিকর ও বিপথগামী। আমরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও বিক্রয়, খুনের মতো অপরাধে লিপ্ত হই।’
কিশোর গ্যাংয়ে জড়িত হওয়া মানে সন্তানের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া উল্লেখ করে এ তরুণ বলেন, ‘আপনার সন্তানকে আমাদের (কিশোর গ্যাং) প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সচেতন হন। তাদের সময়মতো বাড়ি ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। কার সঙ্গে মেলামেশা করছে, তা নজরে রাখুন। নিয়মিত কথা বলুন।’
কোনো অভিভাবক চান না, তাঁর সন্তান কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হোক। তেমনই কোনো শিক্ষক চান না, তাঁর ছাত্র এতে জড়িয়ে পড়ুক। সন্তান কীভাবে কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে– প্রশ্ন তুলে সাইফুল বলেন, এদের পেছনে রয়েছে ক্ষমতালিপ্সু পক্ষ।
অল্প বয়সী গ্যাং সদস্যদের হাতে খুন হচ্ছে, রাস্তায় অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে উল্লেখ করে এ তরুণ বলেন, ‘কিশোর গ্যাং সদস্যরা দলবদ্ধ হয়ে নারী ধর্ষণ করছে, পুলিশকে পেটাচ্ছে। কেনই বা রাষ্ট্র কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’
জেলা শহরের বাজার স্টেশন-সংলগ্ন সিএনজি অটোরিকশা মালিক গ্রুপের সুপারভাইজার আলী জোয়ার্দার বলছিলেন, গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে একা একা সচেতনতার দৃশ্য শহরবাসী দেখলেও খুব একটা সচেতন হয়নি। সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নিলে ভালো হতো।
বাজার স্টেশনের শম্পা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, ‘পঞ্চগড় থেকে এসে এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন দেখে হতবাক হয়েছি।’
তরুণের কথায়, দেশে অন্তত ২৩৭টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।
সাইফুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘কিশোর অপরাধ বা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?