অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারে থাকার সময় তাঁর তত্ত্বাবধানে মানুষকে জোরপূর্বক গুম করার পাশাপাশি গত বছর জুলাই ও আগস্ট মাসে বিক্ষোভকারীদের গণহারে হত্যা করা হয়েছেন।

স্কাই নিউজকে অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। শুধু তাঁর নয়, বরং যাঁরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর পরিবারের সদস্য, তাঁর আশ্রিত ব্যক্তি অথবা সহযোগীদের, তাঁদের সবার বিচার করা হবে।’

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে আছেন। হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গোপন বন্দিশালার একটি নেটওয়ার্কের তত্ত্বাবধান করতেন। সেখানে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হতো, কাউকে কাউকে হত্যার অভিযোগও আছে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে এসব করা হতো।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাঁরা ‘আনুষ্ঠানিক চিঠি’ পাঠিয়েছেন, কিন্তু নয়াদিল্লি থেকে এখনো ‘আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব’ পাননি।

প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে আদালতের মুখোমুখি করা হবে, তিনি সশরীর বাংলাদেশে উপস্থিত থাকুন বা না থাকুন।

অধ্যাপক ইউনূস সম্প্রতি গোপন বন্দিশালাগুলোর একটি পরিদর্শন করেছেন, যার কোড নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়নাঘর’। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তিনি সেখানকার দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি চোখে যা দেখতে পারেন, আপনি যা অনুভব করতে পারেন অথবা আপনার পক্ষে যা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব, তার মধ্যে সেগুলো সবচেয়ে জঘন্য।’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, শত শত অ্যাকটিভিস্টকে (সক্রিয় কর্মী) অপহরণ, নির্যাতন এবং হত্যা করতে তিনি তাঁর নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। তবে হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি রাজনৈতিকভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন।

বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ গোপন বন্দিশালা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ওই সব বন্দিশালার তদারকিতে যাঁরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের অনেকে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের সংখ্যা এবং ব্যাপ্তির কারণে কাজ শুরু করতে ‘সময় লাগছে’।

এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁদের প্রত্যেকে এর সঙ্গে জড়িত ছিল, পুরো সরকার এর সঙ্গে জড়িত ছিল। ফলে আসলে কারা এবং অতি উৎসাহী হয়ে কারা এই কাজ করেছে, কারা আদেশ পালন করতে গিয়ে এটা করেছে এবং কারা ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ওই সব কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন, তা আমরা প্রভেদ করতে পারছি না।’

শেখ হাসিনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং পুলিশের বিরুদ্ধেও জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভে দমন-পীড়নে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের একটি হিসাব অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত বিক্ষোভের দিনগুলোতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন দ শ ল বল ছ ন কর ছ ন সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

মে মাসে বিজিবির অভিযানে ১৩৩ কোটি টাকার চোরাচালান জব্দ

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত মে মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৩৩ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।

সোমবার (১৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিজিবি।

বিজিবি জানায়, জব্দ করা চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১ কেজি ৫১২ গ্রাম স্বর্ণ, ১০ হাজার ৫৪৪টি শাড়ি, ৫ হাজার ১৪০টি কাপড়, ৩ হাজার ৪৭২টি তৈরি পোশাক, ১৯ হাজার ৩১৪ মিটার থান কাপড়, ২ লাখ ৫২ হাজার ২৯টি কসমেটিকস সামগ্রী, ৫ হাজার ৪৪৩টি ইমিটেশন সামগ্রী, ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৫১টি আতশবাজি, ১৭ হাজার ৫২৩ ঘনফুট কাঠ, ৩ হাজার ১৫১ কেজি চা পাতা, ৯২ হাজার ৪৮৭ কেজি সুপারি, ৫৩ হাজার ৪০ কেজি চিনি, ২০ হাজার ৪৪২ কেজি সার, ২৯ হাজার ৯৮৫ কেজি কয়লা, ১০০ কেজি সুতা/কারেন্ট জাল, ৩৪১টি মোবাইল, ১৭ হাজার ৬৫টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৬ হাজার ৫৪০টি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ১৫,১১২টি চশমা, ৬ হাজার ৫৪৩ কেজি বিভিন্ন প্রকার ফল, ৫ হাজার ৯৬০ কেজি ভোজ্য তেল, ১০১০ লিটার ডিজেল/অকটেন, ১ হাজার ৫২৬ কেজি পিঁয়াজ, ৮ হাজার ৮২৬ কেজি রসুন, ২০ হাজার ৬৪২ কেজি জিরা, ১১ হাজার ২৩৬ প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার বীজ, ৫০ হাজার ১৯১ কেজি ফুচকা, ৯ হাজার ১৭৯ কেজি মাছ, ৫০ হাজার ৬০৩ পিস চিংড়ি মাছের পোনা, ৯৩৪ কেজি কফি, ২ লাখ ২৫ হাজার ৩৪৩ পিস চকোলেট, ১ হাজার ১৩১টি গরু/মহিষ, ৪টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ১৩টি ট্রাক/কাভার্ডভ্যান, ১৫টি পিকআপ, ৪টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৯২টি নৌকা, ২৬টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৭২টি মোটরসাইকেল এবং ২২টি বাইসাইকেল।

আরো পড়ুন:

ঘাস খেতে খেতে সীমান্তের ওপারে ১০ গরু, ফেরত দিল বিএসএফ

ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে আরো ২৩ জনেকে ঠেলে দিল বিএসএফ

উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২টি দেশীয় পিস্তল, ৫টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ৯মি.মি. পিস্তল, ২টি শট/পাইপ গান, ৫টি ম্যাগাজিন, ৪টি ককটেল, ২৪টি গুলি এবং ১টি হ্যান্ড গ্রেনেড।

এছাড়া গত মাসে বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। জব্দ করা মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৯৬৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১০ কেজি ৯৩৫ গ্রাম হেরোইন, ২৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ কেজি ৪১০ গ্রাম কোকেন, ১০ হাজার ৫২১ বোতল ফেনসিডিল, ৮ হাজার ৯৮৩ বোতল বিদেশি মদ, ৭১.২৫ লিটার বাংলা মদ, ৮১৩ বোতল ক্যান বিয়ার, ১ হাজার ৯১৩ কেজি ৬৩০ গ্রাম গাঁজা, ২ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ৩০ হাজার ১১৫টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৫৪ ঞাজার ৩৪৭ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ৫ বোতল এলএসডি, ২০ হাজার ৪৯৩টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৭৩৭টি এমকেডিল/কফিডিল এবং ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৪ পিস বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ও ট্যাবলেট।

সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৫ জন চোরাকারবারি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৭১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১০ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৯০ জন মিয়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ