দরিদ্র পরিবারের সন্তান শান্ত বিশ্বাস। বাবা বাড়িতে শিঙাড়া তৈরি করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। মা বাড়িতে সুতা কেটে যে টাকা আয় করেন, তা দিয়েই কোনোমতে চলে তাঁদের সংসার। অভাবের সংসারে কষ্ট করে পড়ালেখা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শান্ত। কিন্তু অর্থাভাবে তাঁর ভর্তি ও পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

শান্ত বিশ্বাস সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কল্পনা বিশ্বাস ও জয়কৃষ্ণ বিশ্বাস দম্পতির ছেলে। দুই ভাইবোনের মধ্যে শান্ত বড়। ছোট বোন তৃষ্ণা বিশ্বাস স্থানীয় চৌবাড়ী ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ভর্তি পরীক্ষায় বুয়েটের মেধাতালিকায় ৮৩৫তম ও কুয়েটে ২২৭তম স্থান অধিকার করেছেন শান্ত। তাঁর ফলাফলে স্বজনদের পাশাপাশি আশপাশের মহল্লার সবাই খুশি। শান্তর মা কল্পনা বিশ্বাস বলেন, ছোটবেলা থেকে শান্ত পড়াশোনায় অনেক মনোযোগী। তাঁদের অভাবের সংসারে সামান্য আয়ের কারণে ছেলের পড়ালেখায় তেমন সহায়তা করতে পারেননি। ছেলের নিজের পরিশ্রম দিয়ে এই সফলতা এসেছে।

কল্পনা বিশ্বাস বলেন, পিএসসি থেকে সব পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন শান্ত। অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। এক স্বজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকার একটি কোচিংয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন, কিন্তু টাকার কারণে ক্লাস করা হয়নি। পরে মুঠোফোনে অনলাইনে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী পড়ালেখা জানি না। বুয়েটে পড়তে ছেলের কেমন খরচ হবে, সেটাও জানি না। ঢাকা শহরে আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই। সেখানে নাকি অনেক খরচ। আবার ভর্তিতেও খরচ হবে। সেই অর্থের জোগান আমাদের নেই। তাই বাধ্য হয়েই সাহায্যের প্রার্থনা করছি।’

শান্ত বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তির পর একটানা ১০ মাস সকালে না খেয়ে একবারে দুপুরে খেয়েছি। কলেজে শহরের বন্ধুদের সঙ্গে পড়ার সময় মনে মনে বলতাম, এই কষ্টগুলোই আমাকে শক্তিশালী করছে। সব কষ্টকে শক্তি বানিয়ে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেব। বুয়েটে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমার বড় একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আমার মা–বাবার পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার প্রতিবেশী ও দেশের মানুষকে সাহায্য করতে চাই।’

শান্তর বাবা জয়কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘ছেলের এই সফলতায় আনন্দ করব না দুঃখ করব, বুঝে উঠতে পারছি না। জীবনে কখনো কারও কাছে সাহায্যের হাত বাড়াইনি। বুয়েটে পড়ালেখা ও ঢাকায় থাকা-খাওয়ার যে খরচ, তাতে ছেলেকে বুয়েটে পড়ানো আমার মতো দরিদ্র মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যদি কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শান্তর চেষ্টা ও একাগ্রতা এই সফলতা এনে দিয়েছে। একটু সহায়তা পেলে তাঁর মাধ্যমে দেশ ও জাতি সুফল পাবে—এমনটিই তাঁর বিশ্বাস।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

চুইঝাল চাষে সাফল্য পেয়ে প্রবাসফেরত শাহ আলম বললেন, ‘আর বিদেশে যাব না’

সিরাজগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল চাষ করে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন বিদেশফেরত এক ব্যক্তি। জেলায় মসলাজাতীয় ফসল চুইঝালের সফল বাণিজ্যিক চাষ এটিই প্রথম। এই সফলতায় বর্তমানে এলাকার কৃষক, তরুণ ও যুবকেরা চুইঝাল চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ওই ব্যক্তির নাম শাহ আলম (৪৫)। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের শুকুর আলীর বড় ছেলে। প্রায় এক যুগ সৌদি আরবে প্রবাসজীবন কাটিয়ে গ্রামে ফিরে ২০২২ সালে সিরাজগঞ্জে চুইঝাল চাষের উদ্যোগ নেন তিনি।

সম্প্রতি এক দুপুরে শাহ আলমের চুইঝালের খেতে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে ফসল উত্তোলন করা হচ্ছে। বেশ কিছু স্থানে সমূলে চুইঝাল গাছগুলো তুলে বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারেরা গিয়ে এসব চুইঝাল কিনে নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থাতেই ইউটিউবে খুলনা এলাকায় চুইঝাল চাষে কৃষকদের সফলতা দেখে আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে খুলনা এলাকায় চুইঝালের চারা উৎপাদকারী একটি নার্সারির মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাকে বেশ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এরপর দেশে ফিরে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সমন্বিত কৃষি ইউনিটের (কৃষি খাত) আওতায় উচ্চমূল্যের মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়নকারী স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এনডিপি) সহায়তায় চুইঝালের চাষ শুরু করি। ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট বাড়ির পাশে ৩৩ শতক জমি ৩ বছরের জন্য ৬০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে এগুলোর চাষ শুরু করা হয়।’

শাহ আলমের দাবি, চুইঝাল চাষ শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে চলতি বছর দুই ধাপে ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করেছেন।

সিরাজগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল চাষ করে সফল হওয়ার দাবি করেছেন প্রবাসফেরত শাহ আলম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এ সপ্তাহের রাশিফল (১৪-২০ জুন)
  • চুইঝাল চাষে সাফল্য পেয়ে প্রবাসফেরত শাহ আলম বললেন, ‘আর বিদেশে যাব না’