ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে পুলিশ ধরবে না—এমন কথা বলে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলা করার পর গতকাল রোববার রাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিউল আলমের ওপর হামলা করেছেন ‘সমন্বয়কের’ বড় ভাই।

শফিউল আলম ভাইটকান্দি ইউনিয়ন সখল্যা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলীর ছেলে। তাঁকে পুলিশ ধরবে না—এমন শর্তে একই গ্রামের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেওয়া ওবায়দুল হক পাঁচ হাজার টাকা নেন। টাকা নেওয়ার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে গতকাল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলী বাদী হয়ে ফুলপুর থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন।

আরও পড়ুনস্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকে পুলিশ ধরবে না—এমন কথা বলে সমন্বয়ক পরিচয়ে টাকা নেন যুবক০৮ মার্চ ২০২৫

শফিউল আলম বলেন, ‘গতকাল রাত ৮টার দিকে সখল্যা মোড়ে একটি ফার্মেসির সামনে বেঞ্চে বসে ছিলাম। ওই সময় শাবল নিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেন শহীদুল। এ সময় শহীদুলের সঙ্গে আমার ধস্তাধস্তি হয়। স্থানীয় লোকজন আসার পর তিনি পালিয়ে যান। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।’

শফিউল আলম আরও বলেন, ‘টাকা নেওয়ার ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। তা ডিলিট করার জন্য হুমকি দিতে থাকেন শহীদুল। কিন্তু আমি সেটি ডিলিট না করায় এবং কথিত সমন্বয়ক ওবায়দুলের বিরুদ্ধে আমার বাবা মামলা করায় আমার ওপর হামলা করা হয়।’

আরও পড়ুনময়মনসিংহে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় মামলা২০ ঘণ্টা আগে

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাদি বলেন, টাকা আদায়ের ঘটনায় ওবায়দুল হকের বিরুদ্ধে গতকাল মামলা হয়েছে। ওই মামলার জেরে বাদীর ছেলেকে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পায়। লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমন বয়ক য় র ঘটন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ