একটি মহল বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে: আব্দুস সালাম
Published: 12th, March 2025 GMT
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন, “দেশে একটি মহল অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে এবং বিএনপিকে দোষারোপ করে জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না।”
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে বিভাগের বিভিন্ন জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘একটি মহল দেশে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা চেষ্টা করছে বিএনপিকে দোষারোপ করে জনবিচ্ছিন্ন করার। কিন্তু সেই অপচেষ্টা সফল হবে না। আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু বিএনপির ক্ষতি করতে পারেনি। অন্য কেউও পারবে না।’’
আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘গত ৫ আগস্টের সাত মাস পরও দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। মানুষ জানতে চায়, নির্বাচন কবে হবে, কীভাবে হবে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আগে ছিল, এখনো চলছে। যারা নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়, তাদের বিষয়ে সন্দেহ আছে। তারা কি আবারও আওয়ামী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়?’’
বিএনপি নেতাকর্মীদের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৭ বছর ধরে লড়াই করছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবু তারা ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রতিশোধপরায়ণ হননি, যেন দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির অবনতি না হয়।’’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও ওবায়দুর রহমান চন্দন, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ।
সভায় রাজশাহী বিভাগের বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল, মহিলাদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন। সেখানে ৫ আগস্টের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
ঢাকা/কেয়া/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।