রাজধানীর ওয়ারী থেকে এক নারী ও তাঁর শিশুসন্তান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। তারা হলেন– লামিয়া তাসমেরী মুন (৩২) ও আহনাফ কবির ইনাফ (৭)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে বের হওয়ার পর আর তাদের সন্ধান মেলেনি। সন্ধ্যায় একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল করে স্বজনকে বলা হয়, তারা ভালো আছেন। এরপর সেই নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
লামিয়ার স্বামী হুমায়ুন কবির পুরান ঢাকার নবাবপুরে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন। তিনি সমকালকে জানান, ওয়ারীর যুগীনগর লেনে পরিবারের সঙ্গে থাকেন লামিয়া। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ওয়ারী স্ট্রীটের তিন নম্বর গলির ইএলসি স্কুলে ইনাফের পরীক্ষা ছিল। এজন্য ছেলেকে নিয়ে তিনি স্কুলে যান। দুপুর ১২টায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মা–ছেলে স্কুলের সামনে থেকে হেঁটে অদূরে চৌরাস্তা পর্যন্ত যান। এই দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তবে এরপর তারা কোন দিকে গেছেন, নাকি কেউ তাদের তুলে নিয়ে গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
হুমায়ুন কবির জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি লামিয়ার মা মনোয়ারা বেগমকে কল করে বলেন, আপনার মেয়ে ও নাতি ভালো আছে। পরে সেই নম্বরটির ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হয়। দেখা যায়, বরিশালের হিজলার এক ব্যক্তির নামে সেটির নিবন্ধন রয়েছে। সেই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা। তবে কলটি করা হয়েছে ডেমরার ডগাইর এলাকা থেকে। এ বিষয়ে ওয়ারী থানা পুলিশ ও র্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।
ওয়ারী থানার ওসি ফয়সাল আহমেদ সমকালকে বলেন, নিখোঁজ নারী–শিশুর সম্ভাব্য একটি অবস্থানের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের পর জানা যাবে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’