পবিত্র ও উৎসবমুখর সময়ে মাস্টারকার্ড ঘোষণা করেছে তাদের বিশেষ রমজান অফার। রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কার্ডহোল্ডারদের জন্য বিশেষ ছাড় এবং সুবিধা দিচ্ছে মাস্টারকার্ড। প্রতিষ্ঠানটির এ ঘোষণাকে শুধু প্রচারণা হিসেবে নয়, বরং বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত উৎসবকে আরও উজ্জ্বল করার এক অভিনব উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মাস্টারকার্ড জানিয়েছে, ফ্যাশন ও প্রিমিয়াম জুয়েলারি খাতে মাস্টারকার্ডের অফারের আওতায় কার্ডহোল্ডাররা ৪০টি শীর্ষ লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডের ১৭৫টিরও বেশি আউটলেটে ২৫% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া রমজানজুড়ে ৫০টি শীর্ষ হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ‘বাই ১, গেট ১’ এবং ‘বাই ১, গেট ৩’ অফারের সুবিধা পাবেন তাদের কার্ডহোল্ডারররা। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দ্য ওয়ে ঢাকা, সিক্স সিজনস হোটেল গুলশান, পার্ল হোটেল, হোটেল সারিনা এবং হোটেল বেঙ্গল ব্লু বেরির মতো শীর্ষস্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এ ছাড়া কিভা হান, কারিমস, ক্যাফে কলম্বিয়া ও বাওয়ের মতো ২০টি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টে মাস্টারকার্ড দিয়ে পেমেন্ট করলে ২০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে।
‘গ্রোসারি মানেই মাস্টারকার্ড’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে মাস্টারকার্ড রমজান মাসে নির্দিষ্ট গ্রোসারি দোকান ও সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করলে আকর্ষণীয় পুরস্কার দিচ্ছে। অফারটি উপভোগ করতে কার্ডহোল্ডারদের শপিং পার্টনার স্টোরে যেমন স্বপ্ন, ইউনিমার্ট, আগোরা, মীনা বাজার, লাভেন্ডার, প্রিন্স বাজার ও দ্য ডেইলি শপিংয়ে অন্তত ৪টি লেনদেন করতে হবে। পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ৫০ হাজার পর্যন্ত গ্রোসারি ভাউচার, গ্যাজেট ও ইলেকট্রনিক্স। এ ছাড়া অনলাইন গ্রোসারি চালডাল.
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, মাস্টারকার্ড ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি কার্ডহোল্ডারদের লেনদেনের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন খাতে মাসব্যাপী অফার ও ডিসকাউন্ট কার্ডহোল্ডারদের উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ পেমেন্ট সুবিধা, অসাধারণ সেবা ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মাধ্যমে তারা ঈদ শপিং উপভোগ করবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।