মাগুরার সেই শিশুর স্মরণে কুমিল্লায় মোমবাতি প্রজ্বালন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শিশুটিকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জনসম্মুখে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। ‘ধর্ষণ প্রতিরোধী ছাত্রসমাজ, কুমিল্লা’র ব্যানারে আজ বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন তাঁরা। পরে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন।

ঘণ্টাব্যাপী চলা এ কর্মসূচিতে কুমিল্লা নগর ও জেলার বিভিন্ন স্কুল–কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বিক্ষোভ সমাবেশের আগে শিক্ষার্থীরা মোমবাতি প্রজ্বালন করে শিশুটিকে স্মরণ করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রকাশ্যে ফাঁসি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারকেই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ও সচেষ্ট হতে হবে।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটিকে বাঁচানো গেল না৯ ঘণ্টা আগে

ধর্ষণবিরোধী ছাত্রসমাজের পক্ষে মাকসুদা সুলতানা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা কুমিল্লার পূবালী চত্বরের পূবালী ব্যাংকের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গভীর শোক ও ন্যায়বিচারের দাবিতে একত্র হয়েছি। মাগুরায় যে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিল, তা দেশের প্রতিটি মানুষ জানে। সে আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার প্রতি হওয়া অবিচার আমরা ভুলিনি এবং ভুলব না। শুধু মাগুরার শিশুটি নয়, বিগত সময়ে বাংলাদেশে অগণিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো একটি ঘটনার বিচারের দৃষ্টান্তও স্থাপিত হয়নি। আমরা দল-মতনির্বিশেষে সবাই ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই।’

আরও পড়ুনমাগুরায় শিশুটির প্রথম জানাজার পর আসামিদের বাড়িতে আগুন১ ঘণ্টা আগে

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ইম্পা ফারহা বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সরকার। আমরা মনে করি, এই সরকার আমাদের কথা শুনবে। আমাদের বার্তা এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছাবে। আমরা আশা করি, এই ধর্ষকদের বিচার বাংলার বুকে অবশ্যই হবে। যদি এই সরকার ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়, আমরা তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলব।’

আরও পড়ুনধর্ষকের বিচারসহ ৩ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ম মব ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে একজনের ফাঁসি কার্যকর

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। দেশটির বিচার বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইরানের বার্তা সংস্থা মিজানে প্রকাশিত বিচার বিভাগের ঘোষণায় বলা হয়, গতকাল বুধবার সকালে মোহসেন লাঙ্গারনেশিন নামের ওই ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই বছর ধরে লাঙ্গারনেশিন মোসাদকে ‘ব্যাপক লজিস্টিক, প্রযুক্তিগত এবং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত সহায়তা’ দিয়ে আসছিলেন।

লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে ওঠা সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলোর একটি হলো, তিনি ২০২২ সালের মে মাসে ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কর্নেল সাইয়াদ খোদায়িকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন। ঘটনার দিন তেহরানে নিজ বাড়ির দিকে ফিরছিলেন কর্নেল খোদায়ি। ওই সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা বন্দুকধারীরা তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে।

মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কর্নেল খোদায়ির হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছিল।

মিজানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খোদায়ির গতিবিধি নজরে রাখার জন্য মোহসেন লাঙ্গারনেশিন নিজে একটি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন। তিনি সেই মোটরসাইকেলের মাধ্যমে নজরদারি চালাতেন এবং সব তথ্য মোসাদকে সরবরাহ করতেন। হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন।

শুধু তা–ই নয়, লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিল্প এলাকা ইস্পাহানে হামলায় সহায়তার অভিযোগও আনা হয়েছে।

ইরান সরকারের দাবি, মোহসেন লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে তাদের হাতে গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিগত প্রমাণ রয়েছে। এসব তথ্য প্রমাণ করে যে লাঙ্গারনেশিন এসব অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। লাঙ্গারনেশিন নিজেই তাঁর সম্পৃক্ততার কথা সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করেছেন বলেও দাবি করেছে ইরান সরকার।

তবে নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) প্রধান মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেছেন, ‘লাঙ্গারনেশিনকে সম্পূর্ণ একতরফা ও অনৈতিক বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। নির্যাতন করে তাঁর স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।’

বার্তা সংস্থা এএফপিকে মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, ‘ইরানি কর্তৃপক্ষের মৃত্যুদণ্ডযন্ত্র প্রতিনিয়ত বেগবান হয়ে উঠছে—আরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’

এসব মৃত্যুদণ্ডকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন মাহমুদ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন আবদুর রহমান বোরুমান্দ সেন্টার লাঙ্গারনেশিনের মামলাটি নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। সংগঠনটি বলছে, মোহসেন লাঙ্গারনেশিনকে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে গ্রেপ্তারের পর বিচারক আবুলঘাসেম সালাভাতির নেতৃত্বে তেহরানের একটি রেভল্যুশনারি কোর্টে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচারক সালাভাতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আছে। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার জন্য তাঁর কুখ্যাতি রয়েছে।

বোরুমান্দ সেন্টার আরও বলেছে, লাঙ্গারনেশিন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল দাবি করেছিলেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অভিনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী নাজানিন বনিয়াদি লিখেছেন, ‘রক্তপিপাসু ইসলামি প্রজাতন্ত্র আবারও একজন নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসি দিল।’

ইসরায়েলের সঙ্গে দশকের পর দশক ধরে ছায়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইরান এর আগেও মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেক মানুষকে ফাঁসি দিয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে চালানো নাশকতা ও গুপ্তহত্যার চেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের এমন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তিনজন পুরুষ ও একজন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

লাঙ্গারনেশিনের মৃত্যুদণ্ড এমন সময়ে কার্যকর করা হলো, যখন কিনা ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি অভিযোগ করেছেন, এই আলোচনার প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে ইসরায়েল সচেতনভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তেহরানের তথ্যমতে, আগামী শনিবার রোম শহরে ওমানের মধ্যস্থতায় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চতুর্থ দফার পারমাণবিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ