ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লুট করেছিল। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম), আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তাঁর জামাই বেলাল আহমেদ। সরকার পতনের পর ব্যাংক দুটির আমানতকারীরা টাকা তুলতে সমস্যায় পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে এ দুই ব্যাংককে আবারও টাকা ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার দেওয়া হবে আড়াই হাজার কোটি টাকা। নতুন টাকা ছাপিয়েই তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই অনুমোদন দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই ব্যাংক তারল্য সমস্যায় ছিল। বেশ কিছুদিন আগে আবেদন করেছিল। বৃহস্পতিবার তাদের আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে ব্যাংক দুটি আড়াই হাজার কোটি টাকা ধার পাবে।’ কত দিন এভাবে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে, এর কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব অবশ্য মুখপাত্র দিতে পারেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে দেড় হাজার কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে এক হাজার কোটি টাকার তারল্য–সহায়তা দেওয়া হবে। নতুন এই আড়াই হাজার কোটি টাকাসহ বর্তমান গভর্নরের আমলে এ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে এভাবে দেওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এসআইবিএলকে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টাকা ছাপিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংককে ৫ হাজার কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে ১০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংককে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে।

দুই ব্যাংক তারল্য সমস্যায় ছিল। বেশ কিছুদিন আগে আবেদন করেছিল। আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার তাদের আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে ব্যাংক দুটি আড়াই হাজার কোটি টাকা ধার পাবেমোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী, সহকারী মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক

২০২২ সালের শেষ দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ঋণসংক্রান্ত জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হলে গ্রাহকেরা সতর্ক হয়ে পড়েন। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংককে ধার দেওয়া শুরু করে, তবে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেনি। সরকার পতনের পর ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় ও ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়। এরপর টাকা ধার দেওয়া শুরু হয়। এখন ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি কীভাবে উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের কারণে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকা তোলার চাপ বেড়ে গেছে। এ জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হচ্ছে। নাহলে এক ব্যাংকের কারণে অন্য ব্যাংকগুলোতে টাকা তোলার চাপ শুরু হবে। এমন পরিস্থিতিতে অন্য কোনো করণীয় নেই। তবে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে, এই টাকা কোনোভাবেই আমানতকারীদের দেওয়া ছাড়া অন্যত্র ব্যবহার করা যাবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে একের পর এক অঘোষিত ভাগাড়, বর্জ্য ফেলে পরিবেশদূষণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলী এলাকা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার এই এলাকায় গেলে দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ময়লার স্তূপ। মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।

শুধু হাড়াতলী এলাকাই নয়; ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অঘোষিত ভাগাড় গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলার অংশ। এর মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে তাদের সংগ্রহ করা ময়লা ফেলছে। এতে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়তে, মহাসড়ক পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে। এভাবে পরিবেশদূষণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।

হাড়াতলী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানটিতে ময়লা ফেলা শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এরপর সেটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভাগাড়ে। দিন যত গেছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার ততই দীর্ঘ হয়েছে। এ কারণে ওই স্থান দিয়ে হেঁটে চলাচল করা বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আশপাশের বসবাসকারীরা। ভাগাড়ের আশপাশে অন্তত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে নাকাল।

এভাবে পরিবেশদূষণ বন্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করছি। তবে এ বিষয়ে মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে।মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব, উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়লা ফেলতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন সবুজে ঘেরা এলাকাটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ময়লা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন বলে, তারা নাকি এখন ময়লা ফেলে না। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, ময়লা কারা ফেলছে?’

স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না দুর্গন্ধের জন্য। একটু বাতাসেই নাকে ভেসে আসে ময়লার দুর্গন্ধ। কলেজে প্রবেশের সময় নাক চেপে ধরে আসতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাড়াতলীতে তিন মাস ধরে তাঁরা আবর্জনা ফেলছেন না। সিটি করপোরেশনের ফেলা ময়লাগুলো ভেকু দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন রাতের আঁধারে আশপাশের লোকজন এবং বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। যারা ময়লা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার প্রবেশমুখ বালুজুড়ি এলাকায় ময়লার ভাগাড়

সম্পর্কিত নিবন্ধ