ঈদে বাসাবাড়িসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নগরবাসীকে ডিএমপির নির্দেশনা
Published: 19th, March 2025 GMT
ঈদুল ফিতরে ঢাকা মহানগরীতে বাসাবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের নিরাপত্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে নগরবাসীকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার ডিএমপির গণমাধ্যম এবং জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদ্যাপনের লক্ষ্যে এবং ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ডিএমপি সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ইতিমধ্যে ‘অক্সিলারি পুলিশ’ নিয়োগ করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ডিএমপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে পুলিশের গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে নিরাপত্তা সচেতনতাবোধ তৈরি করা গেলে, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ও অপরাধ দমনে অধিকতর সফল হওয়া সম্ভব।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএমপির পক্ষ থেকে নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনাসমূহ মেনে চলার জন্য সম্মানিত নগরবাসীকে অনুরোধ করা হলো:
১.
বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তারক্ষীদের ডিউটি জোরদার করতে হবে এবং যেকোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা তদারক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে ছুটি প্রদান না করে একটি অংশকে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রাখা যেতে পারে, যাতে তারা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাব্যবস্থা সার্বিক তদারক করতে পারে।
২. বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ত্যাগের আগে দরজা-জানালা সঠিকভাবে তালাবদ্ধ করে যেতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক তালা ব্যবহার করা যেতে পারে। দরজা-জানালা দুর্বল অবস্থায় থাকলে তা মেরামত করে যথাসম্ভব সুরক্ষিত করতে হবে।
৩. বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে এবং স্থাপিত সিসি ক্যামেরাসমূহ সচল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বাসাবাড়ির মূল দরজায় অটোলক ও নিরাপত্তা অ্যালার্মযুক্ত তালা ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. রাতে বাসা ও প্রতিষ্ঠানের চারপাশ পর্যাপ্ত আলোকিত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. অর্থ, মূল্যবান সামগ্রী ও দলিল নিরাপদ স্থানে বা নিকটাত্মীয়র হেফাজতে রেখে যেতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাংক লকারের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
৭. বাসাবাড়ি ত্যাগের আগে যেসব প্রতিবেশী/পাশের ফ্ল্যাটের অধিবাসী ঢাকায় অবস্থান করবেন, তাঁদের বাসার প্রতি লক্ষ রাখতে অনুরোধ করতে হবে এবং ফোনে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
৮. ভাড়াটেদের আগেই বাসার মালিককে ঈদ উপলক্ষে বাসা ত্যাগের বিষয়টি জানাতে হবে।
৯. অনুমতি ছাড়া কেউ যেন বাসা বা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে বাসা বা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীকে সতর্ক করতে হবে ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে।
১০. বাসাবাড়ি বা প্রতিষ্ঠান ত্যাগের আগে লাইট, ফ্যানসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক লাইনের সুইচ, পানির ট্যাপ, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি বন্ধ করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. বাসা বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ির গ্যারেজ সুরক্ষিত রাখতে হবে।
১২. বাসার জানালা/দরজার পাশে কোনো গাছ থাকলে অবাঞ্ছিত শাখা-প্রশাখা কেটে ফেলতে হবে, যাতে অপরাধীরা গাছের শাখা-প্রশাখা ব্যবহার করে বাসায় প্রবেশ করতে না পারে।
১৩. মহল্লা/বাড়ির সামনে সন্দেহজনক কাউকে/দুষ্কৃতকারীকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাকে অবহিত করতে হবে।
১৪. ঈদে মহল্লা/বাসায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানাকে অবহিত করতে হবে।
জরুরি প্রয়োজনে পুলিশি সহায়তার জন্য যোগাযোগের কয়েকটি নম্বর দিয়েছে ডিএমপি।
ডিএমপি কন্ট্রোল রুমের নম্বর: ০১৩২০-০৩৭৮৪৫; ০১৩২০-০৩৭৮৪৬; ২২৩৩৮১১৮৮; ০২৪৭১১৯৯৮৮; ০২৯৬১৯৯৯৯।
জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর: ৯৯৯।
ঢাকা মহানগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও জান-মাল রক্ষা ডিএমপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে মহানগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে ডিএমপি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ নগরব স র জন য ত করত ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।