২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে কর আদায় নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন সাংবাদিকেরা। একই সঙ্গে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন তাঁরা। আজ বুধবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে এক প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব দেন সাংবাদিকেরা।

আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী বাজেট অহেতুক বড় হবে না। এ বাজেট হবে বাস্তবমুখী। আর বাজেট বক্তব্যে থাকবে না কথার ফুলঝুরি। কোনো মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হবে না। প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা অংশ নেন।

অর্থসচিব মো.

খায়েরুজ্জামান মজুমদার সূচনা বক্তব্য দেওয়ার পর গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা একে একে তাঁদের পরামর্শ দেন। সবার শেষে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও খুব একটা বড় হবে না বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর পদক্ষেপ থাকবে আগামী বাজেটে। শুধু তা–ই নয়, মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং আয় বৃদ্ধির চেষ্টাও থাকবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগে যেসব কাজ করার কথা বলা হতো, পরে সেগুলো হতো না। আমরা এ ব্যাপারে; অর্থাৎ প্রভাব ও বাস্তবায়নের ব্যাপারে নজরে রাখব। আর আগে বাজেট বক্তৃতা ২০০ থেকে ৩০০ পৃষ্ঠা হতো। এবার তা ৫০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠার বেশি হবে না।’

আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ কিছু বাড়ানোর কথা জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সময় সংক্ষিপ্ত। এ সময়ে মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষয়ে নজর দিতে পারব না। কারণ, এটা আমাদের ম্যান্ডেট নয়।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ এড়াতে পারব না। পাঁচ থেকে ছয়টি দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে। এতে আমাদেরও গৌরব হবে।’

সাংবাদিকদের পরামর্শ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, দক্ষ জনবল সৃষ্টি, ভ্যাটের একক হার, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করা, ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলা, সংবাদপত্রশিল্পের জন্য শুল্কছাড়, আয়কর দেওয়ার ক্ষেত্রে কালোটাকার মালিকদের তুলনায় সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায্য না করা, ট্রেডিং করপোরেশন আব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা, রেশনপদ্ধতি চালু করা, বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে কর আদায় নিশ্চিত করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নজর বৃদ্ধি, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালগুলোর আয়ের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন সাংবাদিকেরা।

যুগান্তর–এর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জ আসে, তা মোকাবিলায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, একসময় রেশন দেওয়া হতো। ভারতে এখনো দেওয়া হয়। রেশনব্যবস্থা চালুর কথা ভাবা যেতে পারে।

দেশে কর্মসংস্থানের প্রকৃত তথ্য পাওয়ার জন্য সরকার যাতে ব্যবস্থা নেয়, সেই পরামর্শ দেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন। তিনি বলেন, বাজেটের আকারের সঙ্গে বাজেট বক্তব্যের আকারও বাড়ছে। বাজেট বক্তব্যেও সংস্কার দরকার।

সেবা খাত হওয়া সত্ত্বেও সংবাদপত্রশিল্প থেকে সরকার অন্য সব খাতের মতোই কর আদায় করে বলে জানান সমকাল–এর বাণিজ্য সম্পাদক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এক মাস চলতে পারে, অন্তত তেমন হারে যেন সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় ভাতা দেওয়া হয়।

আলোচনায় আরও অংশ নেন ইংরেজি দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস–এর সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, দৈনিক খবরের কাগজ–এর সম্পাদক মোস্তফা কামাল, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসির সম্পাদক লোটন একরাম, জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক, চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান, যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক শামীম জাহেদী, রাশেদ কাঞ্চন, কাওসার রহমান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র র পর ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ