জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, পলাশ বিশ্বাস নামের ওই রোগী গত ৬ মার্চ শ্বাসনালি দগ্ধ নিয়ে ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তিনি আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।

শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ১৭ মার্চ ষষ্ঠ তলায় এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ভোরে তিনি একাই জরুরি বাহির দরজা দিয়ে বের হয়ে লিফটে ১৬ তলার ছাদে চলে যান। সেখান থেকে লাফিয়ে নিচে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

আবাসিক সার্জন বলেন, ওই ব্যক্তি গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় ওয়াশিং প্লান্টে কাজ করতেন। সেখানে দুর্ঘটনায় তাঁর শ্বাসনালি দগ্ধ হয়। সেদিনই তাঁকে ঢাকায় এনে ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ১১ দিন আইসিইউতে থাকার পর মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। বিভিন্ন সময় এলোমেলো কথাবার্তা বলতেন। বুধবার তাঁর মানসিক চিকিৎসক দেখানোর কথা ছিল।

মৃত পলাশের ছোট ভাই অলোক বিশ্বাস বলেন, তাদের বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুরের শিবপুর গ্রামে। বাবার নাম জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস। বর্তমানে গাজীপুর টঙ্গী এলাকায় থাকতেন। সেখানে একটি ওয়াশিং প্লান্টে  কাজ করতেন। গত ৬ মার্চ সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর শ্বাসনালি পুড়ে যায়। এর পর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে পলাশকে বেডে দেখে বাইরে চলে আসেন তিনি। এর পর ভোরে নার্সরা তাঁকে জানান, তাঁর ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাঁর ভাই চাঁনখারপুল-সংলগ্ন হাসপাতাল ভবনের কম্পাউন্ডের ভেতরে পড়ে আছেন। সেখানে গিয়ে তিনি পলাশের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

শাহবাগ থানার এসআই আসাদুল ইসলাম জানান, ইনস্টিটিউটের ১৬ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে পলাশ মারা গেছেন। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে। 

এদিকে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ