গাজায় এক দিনে নিহত ৭০ ফিলিস্তিনি, ‘সর্বশেষ সতর্কতা’ জারি ইসরায়েলের
Published: 20th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আজ বৃহস্পতিবারও জোরালো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। চালানো হচ্ছে স্থল অভিযান। এর আগে এক বিবৃতিতে গাজা থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা ও হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের প্রতি ‘সর্বশেষ সতর্কতা’ জারি করেছে ইসরায়েল।
আল-জাজিরা বলছে, গাজাজুড়ে গতকাল বুধবার এক দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার থেকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় আবারও হামলা জোরদার করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে সেখানে নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪৩৬–এ। এর মধ্যে ১৮৩টি শিশু। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য এটা।
গতকাল গাজায় স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। বলা হয়, নিরাপত্তাব্যবস্থা বিস্তৃত করা এবং গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে আংশিক বাফার জোন প্রতিষ্ঠার জন্য মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় স্থল অভিযান আবারও শুরু করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশি সরকারগুলোর আহ্বান অমান্য করে আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর ফলে গাজাবাসী আবারও ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনের মরদেহ খোঁজার মতো করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে।
গাজা নগরীতে কংক্রিটের স্তূপ থেকে এক শিশুর মরদেহ সরানোর চেষ্টা করছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমরা খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছি।’
‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলো ছেড়ে যেতে বেসামরিক গাজাবাসীকে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের শিশুদের নিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের সড়কগুলোয় ভিড় জমান।
রাফায় রেডক্রসের হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা ফ্রেড ওলা বলেন, গাজায় নতুন করে হামলা শুরুর ঘটনা গত দুই মাসের আপেক্ষিক শান্তিকে ভেস্তে দিয়েছে।
তিনি যোগ করেন, ‘এখন আমরা বাতাসে আতঙ্ক অনুভব করছি। আমরা যাঁদের সেবা দিচ্ছি, তাঁদের চোখেমুখে ব্যাথা আর ধ্বংসের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি।’
গাজার বাসিন্দাদের উদ্দেশে দেওয়া সতর্কতামূলক ভিডিওতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘এটাই সর্বশেষ সতর্কবার্তা।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পরামর্শ মেনে নিন। জিম্মিদের ফিরিয়ে দিন। আর হামাসকে সরিয়ে (ক্ষমতা থেকে) সরিয়ে দিন। যাঁরা গাজা ছেড়ে স্বেচ্ছায় বিশ্বের অন্যত্র চলে যেতে চান, সেটাসহ আরও অনেক বিকল্প আপনাদের জন্য উন্মুক্ত হবে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। ৫৮ জন এখনো গাজায় জিম্মি আছেন। আর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, জিম্মি অবস্থায় ৩৪ জন মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, গতকাল এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর গত সোমবার দুপুর নাগাদ নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৫৭৭। গতকাল দুপুর নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৫৪৭। সে হিসাবে গাজায় দুই দিনে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার বাসিন্দা। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান ও ড্রোন হামলায় ৯৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে এএফপির আজকের প্রতিবেদনে নিহত মানুষের সংখ্যা ৪০০–এর বেশি বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন:
‘মা, আমি ক্লান্ত, মরে যেতে চাই’: ইসরায়েলি আগ্রাসনে মানসিক বিপর্যয়ে শিশুরা
গাজায় হামলা চালিয়ে চার শতাধিক মানুষ হত্যার পর নেতানিয়াহু বললেন, ‘এটা কেবল শুরু’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় ইসর য় ল ইসর য় ল র হয় ছ ন মন ত র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫