নদটি দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক
Published: 22nd, March 2025 GMT
দেশের নদ–নদীগুলোর সর্বনাশা চিত্রের অন্যতম উদাহরণ হতে পারে কুড়িগ্রামের চাকিরপশার নদ। নদী–গবেষকেরা বলছেন, সরকারি অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগে এমন কোনো নির্যাতন নেই, যা এই নদের ওপর হয়নি। স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও নদী সংগঠকেরা দিনের পর দিন নদটি দখলমুক্ত ও সুরক্ষার জন্য আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। অবশেষে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে সামনে আছে বড় প্রতিবন্ধকতাও। চাকিরপশারের সুরক্ষার জন্য সেসব প্রতিবন্ধকতা জয় করতে হবে, কোনো সন্দেহ নেই।
চাকিরপশার নদটি তিস্তার উপনদ। এটি মূলত বুড়িতিস্তা নদীর উজানের অংশ। নদটির উৎপত্তিস্থল রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইটাকুড়ি নামক নিম্নাঞ্চল (দোলা) থেকে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা এখনো নদটি নিয়ে সুন্দর স্মৃতি ভুলতে পারেন না। চাকিরপশার ছিল খরস্রোতা ও গভীর একটি নদ। আশির দশকে চাকিরপশারের ওপর আড়াআড়ি সড়ক দিয়ে পানিপ্রবাহে বাধা দেওয়া হলো। তারপর নদের বড় অংশে খণ্ড খণ্ড পুকুর বানিয়ে শুরু হলো দখলের প্রতিযোগিতা। একেকটি পুকুর ৫ থেকে ২৫ একর আয়তনের। এখানেই শেষ নয়, নদটিকে জলমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হলে এর সঙ্গে নদপারের মানুষের ওপরও নির্যাতন বেড়ে গেল। মাছ ধরতে নদে নামার আর সুযোগ থাকল না জেলেদের। দুই বছর আগে চাকিরপশারের এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছিল প্রথম আলোর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
চাকিরপশারের ভেতরে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে উজানে ১৫–২০ হাজার একর জমিতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটি। এ নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে। ২০২৩ সালের আগস্টে হাইকোর্ট নদে থাকা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। এরই সূত্র ধরে শুরু হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কৈলাশকুঠি ও বাঁশেরদহ গ্রামে নদে তৈরি করা বাঁধ ভেঙে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে প্রশাসন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজারহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশাদুল হক। উচ্ছেদ অভিযানে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে সহায়তা করে পুলিশ ও আনসার। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, জমি দখলদারমুক্ত করতে প্রশাসনের পক্ষে ১৩২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার নিষ্পত্তি হলে চাকিরপশার নদ সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে।
আমরা আশা করব, এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। চাকিরপশার নদ সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করার এই প্রচেষ্টা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরেশোরে অব্যাহত থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দখলম ক ত ক ত কর শ র নদ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।
ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।
জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।
ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।
আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’
জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল