মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় বাবু মোল্লা নামে যুবলীগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার ঘটনার পর থেকে বাবু পলাতক। সে উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী। তার বাবার নাম সামসুল মোল্লা।

ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, তাদের বাড়ি গাইবান্ধায়। এখন আলু তোলার মৌসুম হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে কাজ করতে টঙ্গিবাড়ীতে এসেছেন। ইউনিয়নের একটি গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন তারা এবং আলু তোলার কাজ করেন। শুক্রবার বিকেলে তাঁর স্ত্রীকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করে বাবু এবং কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করে চলে যায়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে বাবু পলাতক। তার বাবা ধর্ষণের শিকার নারীকে হুমকি-ধমকি দিয়ে এলাকা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। টঙ্গিবাড়ী থানার এসআই মো.

ওসমান বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রতিবন্ধী শিশুকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগে পরিতোষ চন্দ্র নামে একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত শুক্রবারের এ ঘটনায় শনিবার ফুলবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে। থানার ওসি খন্দকার মহিব্বুল জানান, আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পিরোজপুর সদর উপজেলায় প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবারের এ ঘটনায় শনিবার সদর থানায় মামলা হয়েছে। আসামির নাম মজিবুর রহমান সরদার ওরফে বেনু (৭০)। সদর থানার ওসি আব্দুস সোবাহান জানান, আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে দিদারুল আলম নামে এক ব্যক্তিকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বোয়ালখালী থানার ওসি গোলাম সরোয়ার বলেন, এ ঘটনায় শিশুটির বাবা মামলা করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করেছে আসামি।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ১৩ বছরের প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে জসিম মোল্যা নামে এক ভ্যানচালককে শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, এদিন বিকেলে ভ্যান চালিয়ে উপজেলার এক গ্রামে যায় জসিম। পরে একটি বাড়িতে পানি খাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢুকে শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই শিশুর মা পাশের বাড়ি থেকে এসে দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজনকে জানান। তখন তারা জসিমকে ধরে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। লোহাগড়া থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই জসিমের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাদী। গতকাল বিকেলে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে ঘরে ঢুকে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে মো. মুরাদ নামে এক যুবক। ঘটনার পর বিষয়টি জানাতে মুরাদের বাড়ি যান ভুক্তভোগীর স্বামী। সেখানে তাঁকে মারধর করে তারা। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে আদিতমারী থানায় মুরাদসহ পাঁচজনের নামে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। অন্য আসামিরা হলো– মুরাদের বাবা হাসান আলী, দুই ভাই মিজানুর ও মাহিন এবং হাসানের স্ত্রী মর্জিনা বেগম। বাদীর অভিযোগ, আসামিরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আদিতমারী থানার ওসি আলী আকবর বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ১৮ দিন আটকে রেখে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি ফজলু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে রংপুরের নব্দীগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজারহাট থানার ওসি তছলিম উদ্দিন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর শ ক রব র র এ ঘটন য় শ উপজ ল য়

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ