দেশে ইলন মাস্কের স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ব্যবহার ৯ এপ্রিল
Published: 23rd, March 2025 GMT
আগামী এপ্রিলে দেশে অনুষ্ঠিত হবে চার দিনের ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট–২০২৫’। এ বিনিয়োগ সম্মেলনে ৫০টি দেশ থেকে ৫৫০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী ও প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এ ছাড়া ৯ এপ্রিল সম্মেলনে ইলন মাস্কের স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হবে।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের আয়োজক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগ সম্মেলনের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার এ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এতে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও বড় তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠকের সুযোগ পাবেন। দল তিনটি হলো—বিএনপি, জামাোতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করা যাবে, এমন পাঁচটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিনিয়োগ সম্মেলনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করা হয়েছে। খাতগুলো হচ্ছে—নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল ইকোনমি, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হেলথকেয়ার।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ভালো সাড়া পেয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে ৫০টি দেশ থেকে প্রায় ৫৫০ জন প্রতিনিধি নিবন্ধন করেছেন। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ পাওয়া গেছে চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, জাপান ও ভারত থেকে। এ ছাড়া প্রায় ২ হাজারের বেশি দেশি অতিথি সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
বিডা জানিয়েছে, সম্মেলনের প্রথম দুই দিন অর্থাৎ ৭ ও ৮ এপ্রিল বড় ব্যবসা খাতের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ঢাকার বাইরে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামে অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেড, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড) ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল। পাশাপাশি একই সময়ে ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ, বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন প্রভৃতিকে নিয়ে নেটওয়ার্কিং সেশন অনুষ্ঠিত হবে। বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে ৯ ও ১০ এপ্রিল। ৯ এপ্রিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন।
আশিক চৌধুরী জানান, বিনিয়োগ সম্মেলনের ভেন্যু ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আগামী ৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করা হবে। সেখানে উপস্থিত সব অংশগ্রহণকারী সেটি ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করে সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মনে করছি, বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এ বার্তা দিতে চাই। বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা, সে প্রকৃত তথ্যই তাদের দিতে চাই। তারা সশরীর দেশে এসে সেই বাস্তবতা উপলব্ধি করুক, সেটিই আমরা চাই।’
গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে উল্লেখ করে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে জানতে চান। জবাবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়তো স্থিতিশীল থাকবে। অর্থাৎ না বাড়লেও খুব বেশি কমবে না। তবে আগামী প্রান্তিকগুলোতে ২–৩ শতাংশ হারে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ন অন ষ ঠ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।