হামজা বললেন, ‘আমাদের জেতা উচিত ছিল’
Published: 25th, March 2025 GMT
লেবাননের রেফারি হুসেইন আবো শেষ বাঁশি বাজানোর আগে থেকেই ভারতীয়দের মুখ ভার। জয় দেখতে এসে ফিরতে হচ্ছে গোলশূন্য ড্র নিয়ে! সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল যাঁর কাছে, সেই সুনীল ছেত্রী বলার মতো কিছুই করতে পারেননি। ম্যাচের শেষ ক্ষণে একটি হেড নিয়েছিলেন, তাতে ছিল না তেমন জোর।
ম্যাচে অনেকটা যেন নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন ছেত্রী। ঘরের মাঠে তারকার জ্বলে উঠতে না পারার সঙ্গে গোটা দলের গোল ব্যথর্তা মিলিয়ে ভারত মোটেও খুশি নয় ম্যাচ শেষে। কোচ মানালো মার্কেজের ভাষায়,‘ভারত বাজে ম্যাচ খেলেছে।’
উল্টো ছবি বাংলাদেশ শিবিরে। বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ মিস করলেও বাংলাদেশ দাপুটে ফুটবলই খেলেছে। ভারত বল পজেশনে এগিয়ে ছিল, মাঝমাঠের প্রাধান্যও নিয়েছে। কিন্তু গোলের সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ শিবিরের সবার মুখে তাই হাসি। বাংলাদেশ যেন খুশির একটা রাত কাটাল।
শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের এই রাতটা কখনো ভুলবেন না রাফিয়া চৌধুরী। বাংলাদেশের হয়ে ছেলে হামজার অভিষেক ম্যাচ দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা মাত্র শুরু। আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে সামনে। বাংলাদেশ দল খুব ভালো করেছে। আমরা খুব খুশি ম্যাচ দেখে।’
হামজার স্ত্রী অলিভিয়া চৌধুরীর অনুভূতিও একই। তাঁর মুখেও চওড়া হাসি। অ্যাওয়ে ম্যাচে এই ড্রটা যে জয়েরই সমান বাংলাদেশের কাছে। অলিভিয়া বলেন, ‘আমি ভীষণ খুশি। হামজা ভালো খেলেছে। বাংলাদেশ দলও ভালো খেলেছে। এই খেলাটাই আমরা আশা করছিলাম। আমাদের আশা পূর্ণ হয়েছে।’
ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরেন বাংলাদেশের হয়ে অভিষিক্ত হামজা চৌধুরীকে। তাঁর কাছে যা প্রত্যাশা ছিল, পূরণ করছেন পুরোপুরিই। নিজের ও দলের পারফরম্যান্সে হামজা উচ্ছ্বসিত। তবে জয়টা বাংলাদেশের প্রাপ্য ছিল বলেই মনে করেন তিনি, ‘আমরা কিছু মিস করছি। ফুটবলে মিস হতেই পারে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও মিস হয়। ফলে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। এটা আমাদের জন্য খারাপ দিন ছিল। তবে আমাদের জেতা উচিত ছিল।’
জাতীয় সংগীত যখন বাজে, সেই সময়ের অনূভুতির হামজা মুখে একটু অন্য রকমই শোনাল। প্রথমবারের মতো এমন অনুভূতি তাঁকে ভালো খেলতে আরও উজ্জীবিত করেছে। দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে হামজা বলেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পেরেছি, এতে আমি গর্বিত। তবে এক ড্রতেই শেষ নয়। আমরা অনেক দূর যেতে চাই।’
বাংলাদেশের গ্রুপের অন্য ম্যাচে কাল সিঙ্গাপুর-হংকং গোলশূন্য ড্র করেছে। এখন চার দলেরই পয়েন্ট এক করে। গ্রুপ সেরা দল যাবে ২০২৭ সালে সৌদি আরবে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে। বাংলাদেশও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে চূড়ান্ত পর্বে ওঠার। এত দিন মনের ভেতর পুষে রাখা কথাটা কাল ড্র শেষে বলেও দিলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘অ্যাওয়ে ম্যাচে এক পয়েন্ট পেয়েছি। প্রথমার্ধে অনেক সুযোগ পেয়েও মিস করেছি। আমাদের জেতা উচিত ছিল। যাহোক, আমরা এশিয়া কাপে খেলার আশা রাখি। আজকের (গতকাল) পর সেটা সম্ভব মনে হচ্ছে।’ হামজাকে নিয়েও তিনি খুশি, ‘সে ভালো খেলেছে। যে পর্যায় থেকে সে এসেছে, সেই মান অনুযায়ীই খেলেছে। অন্যরা তাকে সহায়তা করেছে।’
বাংলাদেশ দল ভারতকে তেমন সুযোগই দেয়নি। এটাই এ ম্যাচ থেকে বড় প্রাপ্তি। গোল নষ্ট করার যে আক্ষেপ সেটিও আসলে একঅর্থে জয়ের অনুভূতিই দিচ্ছে দলকে। ম্যাচ থেকে ভারতকে ছিটকে দেওয়া যেত প্রথমার্ধেই। ভারতীয় সাংবাদিকেরা দরাজ প্রশংসা করে গেলেন বাংলাদেশ দলের। তাঁদের কথা—অ্যাওয়ে ম্যাচে এমন চোখরাঙানি ফুটবল যারা খেলতে পারে, ভবিষ্যতে সেই দলের আরও ভালো না করার কোনো কারণ নেই।
১০ জুন ঢাকায় সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের পরের ম্যাচ। শিলং থেকে আজ সেই ম্যাচের জন্য আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি নিয়ে দেশে ফিরবেন হামজা–তপুরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র জ ল দ শ দল অন ভ ত
এছাড়াও পড়ুন:
মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।
সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।
সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।
সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।
সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।
সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।
সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।