আমি তাঁদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চাই না: ন্যান্সি
Published: 26th, March 2025 GMT
দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। এর আগে অডিও ও প্লেব্যাকে তাঁকে দেখা গেলেও সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে গানের খাতা খুলেছেন তিনি। আসছে ঈদে নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি ‘হাউ সুইট’ ওয়েব ফিল্মেও রয়েছে তাঁর গান। ‘মায়া মায়া’ গানটির সুবাদে বালামের সঙ্গে ১৫ বছর পর জুটি হলেন এই শিল্পী। নতুন গানসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। তার
ঈদের আপনার কয়টি গান আসছে?
সিনেমা-ওটিটি মিলে তিনটির মত গান আসছে। এর মধ্যে কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত ‘হাউ সুইট’ ওয়েব ফিল্মে একটি গান এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। এখানে আমার সঙ্গে গেয়েছেন বালম। গানটি প্রকাশের পর ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া শরাফ আহমেদ জীবন পরিচালিত ‘চক্কর’ সিনেমায় একটি গান করেছি। আর সংগীতশিল্পী মিলনের সঙ্গে ‘ঈদ এলো রে’ শিরোনামে একটি গান গতকাল মুক্তি পেয়েছে।
কত বছর পর বালামের সঙ্গে গান.
..
অনেক বছর। কত বছর ঠিক সেটা জানি না। তবে ১৫ বছর তো হবেই। মাঝে হেপাটাইটিস ‘এ’ নিয়ে আমরা একটা সচেতনতামূলক কাজ করেছে। তবে সেটা গান না। কিন্তু বহু বছর পর তাঁর সঙ্গে দারুণ একটা গান হল। দর্শকও গানটা ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।
কোন চিন্তা থেকে বালামের এতদিন পর একসঙ্গে হলেন?
এটা আসলে আমর আর বালামের চিন্তা ভাবনা না। নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির কাজের সুবাদে আমরা এক হয়েছি। তিনিই আমাদের এক করেছেন। তাঁর ‘হাউ সুইস’ ওয়েব ফিল্মে আমাদের একটি গান আছে, যা গতকাল মুক্তি পেয়েছে।
আপনি তো সাধারণত ছোটপর্দার জন্য গান করেন না।
হ্যাঁ, করি না। এর আগে ভিকি জায়েদের ‘নীল সুখ’ নামের একটি ওয়েব ফিল্মে গান করেছি। এরপর আর কাজ করতে চাইনি। কিন্তু হঠাৎ করেই একজন ফোন করে কাজল আরেফিন অমিকে ধরিয়ে দিল। তাঁর কথা শুনেই রাজি হয়ে গেছি। কারণ, অমি আমার পছন্দের একজন পরিচালক। আমি তাঁর সব কাজ দেখি। তাঁর কাজগুলোর মধ্যে পিওর বিনোদন পাওয়া যায়, যা পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মত। তাই রাজি হয়ে গেছি।
গানের মডেল হিসেবে তাহলে অপূর্ব-ফারিণ কী বাড়তি পাওয়া?
বলা যেতে পারে। যখন এই গানটি করা হয় তখন আমি জানতাম না এই গানের মডেল কে বা কারা হবেন। যখন অভিনেতা অপূর্বর কথা শুনলাম তখন আরও আনন্দ গেলেছে। কারণ, এই মানুষটাকে আমি অনেক পছন্দ করি। আমরা একই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলেও আমাদের কখনো দেখা হয়নি। সঙ্গে আমাদের এই সময়ের অভিনেত্রী ফারিণ তো আছেই। সব মিলিয়ে গানের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে।
নতুন শিল্পীদের সঙ্গে গান...
অনেকে বলেন, উনি (আমি) তো টাকা পেলেই যে কারো সঙ্গে গানটা গেয়ে দেন। আমার কথা হল, আমি তো একদিন নতুন ছিলাম। আমার সঙ্গে কি হাবিব ওয়াহিদ কাজ করেন নি? আমি যদি ভাবি এর সঙ্গে, ওর সঙ্গে গান গাইবো না তাহলে কী হবে? তাঁরা তো আমাকে সন্মনী দিচ্ছেন। সুতরাং আমার তো সবার সঙ্গেই গান গাওয়া উচিত।
কিছুদিন আগে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে আপনার একটি ছবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হল...
এ বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। কারণ, আমার বক্তব্য আমি ওখানি দিয়ে দিয়েছি। আমি যদি এটা নিয়ে কথা বলি তাহলে যারা আমাকে গালি দিচ্ছে তাঁরা ধরে নেবে তাদেরকে আমি অনেক গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমি চাই না তাদের আমি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে।
এবার ঈদ কোথায় করছেন?
ঈদ ঢাকাতেই করছি। আমার মা-বাবা বেঁচে নেই। ঈদ আমেজ কিংবা যেকোনো উৎসব মা-বাবাকে ছাড়া করা খুব কষ্টের। যার বাবা-মা নেই এটা তাঁরাই বোঝেন। তবে এখন সন্তানরাই আমার সব। সন্তান ও পরিবার নিয়েই আমার ঈদ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ