তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল বলেছেন, আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অথবা ইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুকে কারাগার থেকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ‌‌‘প্রতিটি শহরে’ বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। 

তিনি বলেন, দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যে আগামী শনিবার ইস্তাম্বুলে একটি বিশাল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এটি ২০২৮ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ইমামোগলুকে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট করার জন্য দলের প্রচারণার সূচনা করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে শহরেই যাই, সেখানেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।’ ওজেল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, একরেম ইমামোগলু এর মুক্তি দাবি এবং  দেশের জনগণের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস বিক্ষোভকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

তুরস্কে অব্যাহত বিক্ষোভে ব্যাপক ধড়পাড়ক চলছে। মঙ্গলবারও লাখ লাখ মানুষ রাজধানী আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন। এ সময় এএফপির আলোকচিত্রীসহ দেড় হাজারের বেশি মানুষকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের হামলায় দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন। সাংবাদিক আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক সংস্থা। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এ বিক্ষোভে কার্যত চাপে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। 

বুধবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুরুতে ইস্তাম্বুলের মেয়র ইমামোগলুর মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ করলেও এখন তা সরকার পতনের দাবিতে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এরদোয়ানের পতন দাবি করছেন। রাশিয়ার সঙ্গে এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠতা এবং সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে দূরত্বের মধ্যে তুরস্কে এ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। 

ইমামোগলুর সমর্থকরা মনে করেন, গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এরদোয়ান তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাইছেন। সরকার বলছে, এতে তাদের কোনো হাত নেই। বিচার বিভাগ তার নিজ পথেই পরিচালিত হচ্ছে।

দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি দেশটির আগামী নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সমালোচকরা মনে করেন, ইমামোগলুর জনপ্রিয়তার কারণে গত ১৯ মার্চ তাঁকে গ্রেপ্তার করে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান প্রশাসন। গ্রেপ্তারের পর থেকে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা ইমামোগলুর ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন ব্যবহার করছেন। 

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত আট সাংবাদিক আটক হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির আলোকচিত্রী ইয়াসিন আকগুল এবং বুলেন্ট কিক। আটক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ বিক্ষোভে’ অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আকগুলের গ্রেপ্তারকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছেন এএফপি চেয়ারম্যান ফেব্রিক ফ্রাইজ। সাংবাদিক গ্রেপ্তারের কঠোর সমালোচনা করেছে সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার। এ ছাড়া তুরস্কের সাংবাদিক ইউনিয়নও তাদের মুক্তি দাবি করেছে। 

বিক্ষোভে হাজির হয়েছেন ২৮ বছরের সিনার আইলারি। তিনি জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের নন। নিরপেক্ষ দর্শক হিসেবেই এসেছেন। তিনি বলেন, আমি সিএইচপি নেতা ইমামোগলুকে সমর্থন করি না। তাঁকে ভোটও দিইনি। এটা মনে করি যে, যা হয়েছে, তা যে কোনো রাজনীতিকের জন্যই অন্যায্য। কারণ, এটা রাজনৈতিক মামলা। আইলারি বলেন, চার দিনের বিক্ষোভের পর আমার মনে হচ্ছে, বিক্ষোভের মধ্যে গতি কিছুটা মন্থর।

ইস্তাম্বুলে পরপর দুটি মেয়র নির্বাচনে জয়ী ইমামোগলুকে এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয়। এরদোয়ান ২০০৩ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন এবং ২০২৩ সালে দেশটির সাম্প্রতিকতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ইমামোগলুর সমান্তরালে ১৯৯৯ সালে কারারুদ্ধ হওয়ার আগে ১৯৯০-এর দশকে এরদোয়ানও ইস্তাম্বুলের একজন জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন। গ্রেপ্তারের আগের দিন ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় ইমামোগলুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বাতিল করে, যেখানে বলা হয়েছিল, এটি প্রতারণায় অর্জন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য একটি বৈধ ডিগ্রি থাকা পূর্বশর্ত। 

এদিকে বিক্ষোভকারীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে এরদোয়ান বলেন, দেশ খুবই নাজুক সময় পার করছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য আর কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারীরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত রস ক আটক এরদ য় ন র জন ত ক এরদ য় ন ত রস ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

তেহরানে আটকা ইন্টার মিলানের স্ট্রাইকার তারেমি

চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রভাবে জটিল হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক যাতায়াত। এরই মধ্যে বড় এক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের নতুন স্ট্রাইকার ও ইরানি ফুটবলার মেহদি তারেমি। তিনি তেহরানে আটকা পড়েছেন, ফ্লাইট জটিলতায় ইতালি পৌঁছাতে পারছেন না।

বার্তা সংস্থা এএফপি শনিবার (১৫ জুন) জানিয়েছে, ইরানে অবস্থানরত মেহেদি তারেমি বর্তমান উত্তেজনার কারণে দেশে আটকে পড়েছেন এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সূচনালগ্নে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারছেন না।

৩২ বছর বয়সি এই ইরানি ফরোয়ার্ড গত সপ্তাহে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে তেহরানে ছিলেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দেশের হয়ে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ে একটি গোল করেন তিনি। ম্যাচ শেষে ইউরোপে ফেরার কথা থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এবং বিমান চলাচলে সীমাবদ্ধতার কারণে তেহরান থেকে কোনো ফ্লাইট পাচ্ছেন না তারেমি।

আরো পড়ুন:

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে হোয়াইট হাউস কী ভাবছে?

ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?

এএফপি জানায়, তারেমির লস অ্যাঞ্জেলেসে ইন্টার মিলানের ক্লাব বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার অনুপস্থিতি এখন দলের জন্য বড় এক ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কেবল রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, এর প্রভাব পড়ছে খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও বৈশ্বিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানেও। তারেমির মতো একজন আন্তর্জাতিক তারকা যেখানে আটকে পড়েন, সেখানে বিশ্ববাসীর ভ্রমণ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরো বেড়ে যায়।

এই মুহূর্তে ইন্টার মিলান বা ইরানি ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও ক্লাবের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, তারা তারেমির পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে এবং যত দ্রুত সম্ভব তাকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার জন্য কাজ করছে।

এটি শুধু একজন ফুটবলারের আটকে পড়ার গল্প নয়; এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার একটি বাস্তব ও মানবিক সংকটের প্রতিফলন।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হান্নান এবার বিসিবির কোচিংয়ে
  • তেহরানে আটকা ইন্টার মিলানের স্ট্রাইকার তারেমি
  • রাইফেল–পিস্তল নিয়ে খেলার শুরু, ১৬২ বছর পর যেখানে দাঁড়িয়ে জাপানের ক্রিকেট