রমজানে চাহিদা বাড়ায় খামারিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো
Published: 28th, March 2025 GMT
দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পাবনা-সিরাজগঞ্জে গড়ে ওঠা খামারে উৎপাদিত দুধ নিয়ে প্রায়ই বিপাকে পড়তে হয় খামারিদের। চাহিদা কমলে খামারিদের অনেক সময় ‘পানির দরে’ দুধ বিক্রি করতে হয়। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিভিন্ন সময় সড়কে দুধ ঢেলে বিক্ষোভের খবরও আসে। তবে পবিত্র রমজান শুরুর পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে।
চাহিদা থাকায় খামারিরা বর্তমানে খোলাবাজারে দুধ বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছে ধরনা দিয়ে ও দাম বাড়িয়েও প্রয়োজনীয় দুধ পাচ্ছে না।
পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের গরুর দুধ উৎপাদনকারী প্রধান এলাকা। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী এ এলাকায় ছোট-বড় প্রায় ২৫ হাজার দুগ্ধখামার রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে গরু পালন করে দুধ উৎপাদন করা হয়। সব মিলিয়ে এ এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার গরুর দুধ উৎপাদিত হয়। এ এলাকার গরুর দুধের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে সরকারি মিল্ক ভিটা এবং বেসরকারি প্রাণ ডেইরি, আড়ং দুধ, ফার্ম ফ্রেশ, অ্যামোমিল্ক, পিউরা মিল্ক, ইছামতী ডেইরি, আফতাব ডেইরি, রংপুর ডেইরিসহ বেশ কিছু দুধ সংগ্রহকারী ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। উৎপাদিত দুধের বেশির ভাগই এসব প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করে সারা দেশে বিপণন করে। এসব প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দিলে পানির দরে খোলাবাজারে দুধ বেচতে হয় খামারিদের।
খামারিরা বলছেন, বর্তমানে গরুর খাবারের দাম ব্যাপক বেড়েছে। এতে দুধের উৎপাদন খরচও বেড়েছে; কিন্তু সেই তুলনায় দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রমজান মাসের আগ পর্যন্ত দুধের দাম তেমন বাড়ায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছ থেকে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা লিটার দরে দুধ কিনে আসছিল। অথচ খামারিদের দাবি, তাঁদের প্রতি লিটার দুধের উৎপাদন খরচ পড়ে ৬০ টাকার বেশি। খামারিরা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নিয়মিত দুধ বিক্রি ও দুধের দাম বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ধরনা দিয়ে আসছিলেন।
এবারের রমজান মাস আসতেই উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। খোলাবাজারে, ছানা ও ঘি তৈরির কারখানা, ঘোল ও মাঠা তৈরির জন্য দুধের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে।
খামারিরা এখন প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুধ না দিয়ে খোলাবাজারে অথবা ছানা, ঘি ও মাঠা তৈরির কারখানায় ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করছেন। এতে খামারিদের লোকসানের বদলে ভালো লাভ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের জন্য খামারিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। এমনকি তারা এই রমজান মাসে প্রতি লিটার দুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা করেছে; কিন্তু এর পরেও তারা খুব একটা দুধ পাচ্ছে না।
খামারিরা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে আছে অভিযোগ করে বেড়া উপজেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও মীনা ডেইরি ফার্মের মালিক মাহফুজা খানম মীনা বলেন, দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছরজুড়ে দুধের দাম যেমন কম দেয়, তেমনি খামারিদের সব দুধ তারা নেয়ও না। রমজান মাস এলে প্রতিষ্ঠানগুলোই খামারিদের পেছনে ঘোরে। এর পরেও খামারিরা বাইরে দুধ বিক্রি করেই বেশি লাভবান হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো বছরজুড়ে খামারিদের যদি অবহেলা না করে মূল্যায়ন করত, তাহলে খামারিরা নিশ্চয়ই রমজান মাসেও তাদেরই উৎপাদিত দুধ দিত।
পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের গরুর দুধ উৎপাদনকারী প্রধান এলাকা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ স গ রহক র রমজ ন ম স স র জগঞ জ দ ধ উৎপ দ উৎপ দ ত
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত