দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পাবনা-সিরাজগঞ্জে গড়ে ওঠা খামারে উৎপাদিত দুধ নিয়ে প্রায়ই বিপাকে পড়তে হয় খামারিদের। চাহিদা কমলে খামারিদের অনেক সময় ‘পানির দরে’ দুধ বিক্রি করতে হয়। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিভিন্ন সময় সড়কে দুধ ঢেলে বিক্ষোভের খবরও আসে। তবে পবিত্র রমজান শুরুর পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে।

চাহিদা থাকায় খামারিরা বর্তমানে খোলাবাজারে দুধ বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছে ধরনা দিয়ে ও দাম বাড়িয়েও প্রয়োজনীয় দুধ পাচ্ছে না।

পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের গরুর দুধ উৎপাদনকারী প্রধান এলাকা। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী এ এলাকায় ছোট-বড় প্রায় ২৫ হাজার দুগ্ধখামার রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে গরু পালন করে দুধ উৎপাদন করা হয়। সব মিলিয়ে এ এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার গরুর দুধ উৎপাদিত হয়। এ এলাকার গরুর দুধের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে সরকারি মিল্ক ভিটা এবং বেসরকারি প্রাণ ডেইরি, আড়ং দুধ, ফার্ম ফ্রেশ, অ্যামোমিল্ক, পিউরা মিল্ক, ইছামতী ডেইরি, আফতাব ডেইরি, রংপুর ডেইরিসহ বেশ কিছু দুধ সংগ্রহকারী ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। উৎপাদিত দুধের বেশির ভাগই এসব প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করে সারা দেশে বিপণন করে। এসব প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দিলে পানির দরে খোলাবাজারে দুধ বেচতে হয় খামারিদের।

খামারিরা বলছেন, বর্তমানে গরুর খাবারের দাম ব্যাপক বেড়েছে। এতে দুধের উৎপাদন খরচও বেড়েছে; কিন্তু সেই তুলনায় দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রমজান মাসের আগ পর্যন্ত দুধের দাম তেমন বাড়ায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছ থেকে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা লিটার দরে দুধ কিনে আসছিল। অথচ খামারিদের দাবি, তাঁদের প্রতি লিটার দুধের উৎপাদন খরচ পড়ে ৬০ টাকার বেশি। খামারিরা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নিয়মিত দুধ বিক্রি ও দুধের দাম বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ধরনা দিয়ে আসছিলেন।
এবারের রমজান মাস আসতেই উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। খোলাবাজারে, ছানা ও ঘি তৈরির কারখানা, ঘোল ও মাঠা তৈরির জন্য দুধের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুনদুধ নিয়ে বিপাকে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের খামারিরা, কম দামে বিক্রি২৪ জুলাই ২০২৪

খামারিরা এখন প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুধ না দিয়ে খোলাবাজারে অথবা ছানা, ঘি ও মাঠা তৈরির কারখানায় ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করছেন। এতে খামারিদের লোকসানের বদলে ভালো লাভ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের জন্য খামারিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। এমনকি তারা এই রমজান মাসে প্রতি লিটার দুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা করেছে; কিন্তু এর পরেও তারা খুব একটা দুধ পাচ্ছে না।

খামারিরা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে আছে অভিযোগ করে বেড়া উপজেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও মীনা ডেইরি ফার্মের মালিক মাহফুজা খানম মীনা বলেন, দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছরজুড়ে দুধের দাম যেমন কম দেয়, তেমনি খামারিদের সব দুধ তারা নেয়ও না। রমজান মাস এলে প্রতিষ্ঠানগুলোই খামারিদের পেছনে ঘোরে। এর পরেও খামারিরা বাইরে দুধ বিক্রি করেই বেশি লাভবান হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো বছরজুড়ে খামারিদের যদি অবহেলা না করে মূল্যায়ন করত, তাহলে খামারিরা নিশ্চয়ই রমজান মাসেও তাদেরই উৎপাদিত দুধ দিত।

পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের গরুর দুধ উৎপাদনকারী প্রধান এলাকা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধ স গ রহক র রমজ ন ম স স র জগঞ জ দ ধ উৎপ দ উৎপ দ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ