সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে আজ রোববার। সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদযাপন করছেন। সকালে তারা নিজ নিজ এলাকায় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এ পর্যন্ত দেশের ১৮ জেলায় ঈদ উদযাপনের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে ঈদ উদযাপনের চিত্র উঠে এসেছে।
মাদারীপুর
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে মাদারীপুরের ৩০ গ্রামের মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। আজ রোববার সকাল ৯টায় মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের তাল্লুক গ্রামের তাল্লুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের জামাত পড়ান চরকালিকাপুর ফরাজী বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান।
শরীয়তপুরের সুরেশ্বর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর (রহ.
ফরিদপুর
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার প্রায় ১৩ গ্রামে ঈদ উদযাপন হচ্ছে আজ রোববার। সৌদির সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করেন তারা। একদিন আগে যারা রোজা ও ঈদ উদযাপন করেন তারা সবাই চট্টগ্রামের মির্জাখিল শরিফের মুরিদান।
বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের সহস্রাইল, দড়ি সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, বারাংকুলা, বড়গাঁ, মাইটকুমড়া, গঙ্গানন্দপুর, রাখালতলী, কাটাগড়, কলিমাঝি, বন্ডপাশা, জয়দেবপুর ও দিঘীরপাড় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আগাম রোজা পালন শুরু করেন। ১৩টি গ্রামের আংশিক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে পবিত্র রোজা পালন শুরু করেন। তাই একদিন আগেই ওই গ্রামগুলোর অধিকাংশ লোকজন ঈদ উদযাপন করে থাকেন। গ্রামের অন্য সবাই আগামীকাল পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় ও ঈদ পালন করবেন।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ২৩টি গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন হানাফি (রা.) মাযহাবের অনুসারীরা। আজ রোববার সকাল ৯টায় উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকায় গিরদান পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন দুই শতাধিক পরিবারের লোকজন।
ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা ফারুক। তিনি বলেন, কোনো দেশকে ফলো করে নয়, সহিহ হাদিস মেনে আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি। আমরা এই নিয়মে গত ১০ বছর যাবৎ ঈদুল ফিতর ও আযহা উদযাপন করছি।
চট্টগ্রাম
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারী শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েছেন। সকাল ১০টায় মির্জাখীল দরবার শরীফের মাঠে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতের ইমামতি করেন দরবারের বড় শাহজাদা ড.মাওলানা মোহাম্মদ মকছুদুর রহমান। জামাতে আনুমানিক এক হাজারের অধিক মুসল্লি একসাথে ঈদের নামাজ ও মোনাজাত আদায় করেছেন।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, কর্ণফুলী উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরীফের আকিদার মুসলমানেরা ঈদ উদযাপন করছেন।
প্রায় আড়াই শতাধিক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করে আসছেন সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা।
মির্জাখীল দরবার শরীফের মেঝ শাহজাদা মোহাম্মদ মছুদুর রহমান বলেন, ‘প্রায় আড়াইশ বছর আগে সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল গ্রামে হযরত মাওলানা মোখলেছুর রহমান (রহ.) হানাফি মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী পৃথিবীর যে কোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে রোজা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করার ফতোয়া দিয়েছেন তারই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ রোববার ঈদুল ফিতরের ঈদের নামাজ আদায় করে ঈদ উদযাপন করছি।
মছুদুর রহমান জানান, মির্জাখীল এলাকা ছাড়াও উপজেলার গারাংগিয়া, সোনাকানিয়া, ছোটহাতিয়া, আছারতলি, সাইরতলি, এওচিয়া, খাগরিয়া, ছদাহা, গাটিয়াডাঙ্গা এবং লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, চরম্বা ও চুনতি। বাঁশখালী উপজেলার জালিয়াপাড়া, ছনুয়া, মক্ষিরচর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডেংরা, তৈলারদ্বীপ ও কালিপুর পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও, বাহুলী, ভেল্লাপাড়াসহ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ আজ রোববার ঈদুল ফিতরের ঈদ উদযাপন করছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রামে মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারী রয়েছেন। তারাও আজ ঈদ উদযাপন করবেন
রাজশাহী
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার পৌরসভা এলাকার কৃষ্ণপুরে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে কৃষ্ণপুর মুসলিম জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন স্থানীয় ইমাম রহিম গাজী।
ইমাম রহিম গাজী বলেন, মানুষ মনে করে, সৌদি আরবে ঈদ হচ্ছে, তাই আমাদের এই স্থানে ঈদ হচ্ছে। আসলে ব্যাপারটা তা না। চাঁদ শুধু বাংলাদেশ বা সৌদি আরবের জন্য ওঠে না। চাঁদ ওঠে সারা পৃথিবীর জন্য। যেদিন চাঁদ ওঠে সেদিন থেকেই রমজান মাস শুরু হয়।
সাতক্ষীরা
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরার কয়েকটি গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৮টায় সদর উপজেলার ভাড়ুখালি আহলে সুন্না আল জামাত জামে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা হাববুর রহমান।
এছাড়া সাতক্ষীরা সদরের বাউখোলা, তালা উপজেলার জেঠুয়া, ইসলামকাঠি, শ্যামনগর উপজেলার গোয়াল চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একই সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসুল্লিরা। শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৭৬ বিঘিসহ শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কিছু মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন। ৭৬ বিঘি আম বাগানে ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা মোজাম্মেল হক।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন আজ। প্রতিবছর শতাধিক পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করেন। আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মুন্সীপাড়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা ইমান আলী।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে কয়েকটি গ্রামের কিছু মুসল্লি। একদিন আগেই ঈদ পালন করায় স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার সহিহ হাদিস সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়ায় নামাজ আদায় করেন। নামাজে ইমামতি ও খোতবা পাঠ করেন হাফেজ মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। আজ সকাল থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরিফসহ জেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
ঈদের প্রথম জামায়াত দরবার শরিফ মাঠে সকাল ৯টায় অনষ্ঠিত হয়। এই জামায়াতে ঈমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, আগাম রোজা ও দুই ঈদ পালনের প্রবর্তক মাওলানা ইসহাক (রহ.)। ১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা দরবার শরিফের পীর সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রথা চালু করেন। এছাড়াও মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) এর অনুসারী মুসল্লিরা চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একইসঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। পৃথিবীতে চন্দ্র-সূর্য একটি। আলাদা করে কেন ঈদ উদযাপিত হবে।
মৌলভীবাজার
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েছেন মৌলভীবাজার জেলার শতাধিক পরিবারের মুসল্লি। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে মোনাজাত করা হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এখানে এ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আজ সকাল ৭টায় মৌলভীবাজার শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্তা নামক বাসায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নারী ও পুরুষ মুসল্লিরা অংশ নেন। নামাজে ইমামতি করেন আব্দুল মাওফিক চৌধুরী (পীর সাহেব উজান্ডি)।
দিনাজপুর
দিনাজপুরের ৬ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে একদিন আগেই পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৮টায় দিনাজপুর শহরের চারুবাবুর মোড়ের পার্টি সেন্টারে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন কমিটির সভাপতি মোকবুল হোসেন জানান, এবার জেলার ১৩ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভোলা
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোববার ঈদুল ফিরত উদযাপন করছেন ভোলার সাত উপজেলার ১৫ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ। প্রতি বছরের মতো এবছরও ভোলার সুরেশ্বরী দরবার শরিফ ও সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরিফ অনুশারীরা ঈদ উদযাপন করছেন।
শরীয়তপুর
শরীয়তপুরে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে অন্তত ৩০টি গ্রামের সুরেশ্বরীর (রহ.) ভক্ত-অনুসারীরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। আজ রোববার সকালে নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর দরবার শরিফের মাঠে হাজারো মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন।
জান শরীফ শাহ সুরেশ্বরী নামে এক সুফি সাধকের ভক্ত ও অনুরাগীরা শত বছর ধরে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছেন। জেলায় সুরেশ্বর, কেদারপুর, চাকধসহ অন্তত ৩০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ জান শরীফ শাহ সুরেশ্বরীর অনুসারী রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন লক্ষ্মীপুরের ১১ গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ। রোববার সকাল ১০ টায় রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব নোয়াগাঁও তালিমুল কুরআন নূরানী মাদরাসা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন শতাধিক মুসল্লি। এ উপজেলার চারটি ও রায়পুর উপজেলার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নয়, হানাফি মাজহাব অনুসারে ঈদ পালন করছেন বলে জানিয়েছেন ইমাম ও মুসল্লিরা।
বরিশাল
বরিশাল বিভাগের ৭৫টি মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাহবাদ জাহাগীরিয়া শাহসুফি দরবার শরিফের অনুসারী। প্রায় শতাধিক বছর ধরে এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছেন তারা।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার শশীনাড়া গ্রামে ঈদ উদযাপন করছেন ৪০টি পরিবার। আজ সকাল ৮টায় স্থানীয় মসজিদের মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ঈদের নামাজ পড়ান হাফেজ এরশাদ হোসেন। নামাজ শেষে বিশ্বের মুসলিম উম্মার জন্য দোয়া করা হয়।
রংপুর
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে ১২০টি পরিবার। সকাল সাড়ে ৯টায় বড়বিল ইউনিয়নের বাগপুর পূর্ব মৌলভীপাড়া জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল বাতেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র স র শ বর ব র ঈদ ল ফ র উপজ ল র উপজ ল র ম জ উপজ ল র অন স র র র রহম ন উপজ ল য় মসজ দ আসছ ন বগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ