কমলাপুর স্টেশনে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ
Published: 30th, March 2025 GMT
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়েছেন অনেক মানুষ। তবে, বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে যারা এখনো ঢাকা ছাড়তে পারেননি, তারা ঈদের আগের দিন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছেন। এসব মানুষের অনেকেই ট্রেনের যাত্রী। তাই, ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রী সাধারণের কথা বিবেচনা করে রোববার (৩১ মার্চ) বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। এদিন সকাল থেকেই প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ত্যাগ করেছে।
রেল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন অসংখ্য মানুষ। কোনো ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোমাত্রই যাত্রীরা তাতে উঠছেন।
কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেছেন, প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ত্যাগ করছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ২০টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে। সবগুলো ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, যেন ট্রেনের ছাদে কেউ উঠতে না পারে। অনেকেই নিয়মের বাইরে গিয়ে ট্রেনের ছাদে ওঠার চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
স্টেশনে অপেক্ষারত চাঁপাই এক্সপ্রেসের যাত্রী মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমাদের ট্রেন এখনো আসেনি। আশা করছি, ট্রেনে ভালোভাবেই উঠতে পারব। তবে, সিট ঠিকমতো পাব কিনা, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।”
আরেক যাত্রী হেদায়েত উল্লাহ বলেন, “ট্রেনে সিট পেয়েছি। তবে, মানুষের চাপ বেশি। কেউ কেউ সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রা করছেন। এতে কিছুটা হলেও সমস্যা হচ্ছে। ঈদ বলে কথা। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হলে একটু সমস্যা মেনে নিতে হবে।”
ঢাকা/এমআর/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।