দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন
Published: 30th, March 2025 GMT
সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে বরিবার (৩০ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। তারা সৌদির আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা পালন শেষে ঈদ উদযাপন করছেন।
ঈদ উদযাপনে তারা সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মোনাজতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। পরে সেমাইসহ মিষ্টিমুখ করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
ফেনী
ফেনী জেলার তিনটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুরের দুটি পাড়া ও পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
এক টাকায় ১৮ পণ্যের ঈদ উপহার
১০ টাকার ঈদবাজারে ৪০০ পরিবারের মুখে হাসি
পূর্ব সুলতানপুরের শাহ আমানিয়া জাহাগিরিয়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম নবীর ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। একই সময় গ্রামের অপর একটি অংশ পূর্ব সুলতানপুর রশিদিয়া দরবার শরীফের মরহুম মাওলানা গোলাম কিবরিয়া পীরমিয়ার ছেলে মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুইশত বছরের বেশি সময় ধরে তারা সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন।
পূর্ব সুলতানপুর শাহ আমানিয়া জাহাগিরিয়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম নবী বলেন, সকাল থেকে মুসল্লিরা উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদগাহে আসতে শুরু করে। সুশৃঙ্খলভাবে নামাজ শেষ হয়েছে।
এ দিন পরশুরাম উপজেলার পৌর এলাকার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকায় একটি স্থানেও ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুর
গাজীপুরের সদর উপজেলার ডগরি এলাকায় একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৭টার দিকে এই নামাজ হয়। যেখানে কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা নামাজে অংশ নেয়।
নামাজ শেষে মোনাজতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। এ সময় অনেক মুসল্লিকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। নামাজ শেষে পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং মিষ্টিমুখ করেন।
নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রোজার পর এই দিনে তারা আনন্দে মেতে ওঠে।
মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ওই সব এলাকায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা সদরের শিলই ইউনিয়নের উত্তরকান্দি মাঝিবাড়ি ঈদগাহে জাহাগিরিয়া মাঠে সকাল ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেয়।
জাহাগিরিয়া তরিকার অনুসারীদের মতে, পৃথিবীর যে কোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ উদযাপন করা উচিত। তাই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা ঈদ উদযাপন করেন।
শিলই ইউনিয়ন পরিষদ ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ বেপারী বলেন, তাদের ইউনিয়নের জাহাগিরিয়া তরিকার লোকজন ঈদের জামাত পড়েছে।
বগুড়া
বগুড়ার তিন উপজেলার কিছু এলাকায় ঈদ উদযাপন করা হয়েছে। ধুনট উপজেলার হাশুখালী গ্রামে, সোনাতলা উপজেলার কালাইগাটা গ্রামে এবং গাবতলী উপজেলার রেল স্টেশন এলাকা ঈদের নামাজ আদায় করা হয়।
ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার দুটি গ্রামের কয়েক বাড়ির মুসল্লিরা সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। আর গাবতলী উপজেলার রেল স্টেশনের একটি মাঠে সকাল ৮টায় ঈদের অর্ধশত মুসল্লি জামাতের আয়োজন করেন। নামাজ শেষে তারা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিরা ঈদ উদযাপন করেন। সকাল ৮টায় সদর উপজেলা শহরের ফুটবল মাঠ এলাকায় এ ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা রেজাউল ইসলাম।
মুসল্লিরা জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চোরকোল, শ্যামনগর, যাদবপুর; হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দখলপুর, নারায়নকান্দি, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়ীয়া, পারফলসী, পায়রাডাঙ্গা এবং শৈলকুপা উপজেলার ভাটইসহ জেলাশহর থেকে আগত মুসল্লিরা এ ঈদের নামাজ আদায় করেন।
নামাজ শেষে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দিনাজপুর
দিনাজপুরে ৬ উপজেলার কিছু সংখ্যক গ্রামের বাসিন্দাদের একটি অংশ ঈদ উদযাপন করছেন।
দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়া পট্টি পার্টি সেন্টারে; চিরিরবন্দর উপজেলার রাবার ড্যাম এলাকায়; বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা গ্রামের নুরুলহুদা মাদ্রাসা মাঠে, ৬ জোদবানি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী আমগাছি ঈদগা মাঠে; নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাঘবেন্দপুর বাজার মাদ্রাসা মাঠে; কাহারোল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গোরস্থান ঈদগাঁ মাঠে; বিরল থানাধীন ধর্মপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে বনগাঁও জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন কয়েক শতাধিক পরিবার।
সকাল ৯টায় দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলায় সাইতাঁড়া ইউনিয়নের রাবারড্যাম চিরিনদী ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন আশপাশের কয়েকটি পরিবারের মানুষ। এই জামাতে পুরুষ, মহিলা ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক মুসল্লি অংশ নেয়। জামায়াতে ইমামতি করেন মোহাম্মদ আব্দুল আলীম।
চিরিনদী ঈদগাহ মাঠের সভাপতি হাসান আলী জানান, তারা ২০০৯ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা পালন ও ঈদ উদযাপন করেন।
বাগেরহাট
বাগেরহাটের মোংলায় শতাধিক পরিবার ঈদ উদযাপন করছেন। উপজেলার চটের হাট এলাকার ১০০টি পরিবার সকাল ৮টায় চটের হাট জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। জামাতে নারী-পুরুষ অংশ নেয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে মিষ্টি ও সেমাই খেয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
চটের হাট জামে মসজিদের সভাপতি ইয়াসিন শেখ বলেন, ‘‘যারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেননি, তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। আমরা সব মুসলমানের ঐক্য কামনা করি। এ কারণে চটের হাট জামে মসজিদে পরপর দুই দিন ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। যারা আজ ঈদ করছেন, তারা আজ নামাজ পড়েছেন। আর যারা সোমবার বা মঙ্গলবার ঈদ উদযাপন করবেন, তাদের জন্য আলাদা ইমামের নেতৃত্বে জামাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’’
ফরিদপুর
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ১৩টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের সহস্রাইল, দড়ি সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, বারাংকুলা, বড়গাঁ, মাইটকুমড়া, গঙ্গানন্দপুর, রাখালতলী, কাটাগড়, কলিমাঝি, বন্ডপাশা, জয়দেবপুর ও দিঘীরপাড় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন।
সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। মাইটকুমরা জামে মসজিদের ইমাম মো.
এই ১৩টি গ্রামের সবাই একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন না। বেশিরভাগ মানুষ বাংলাদেশে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদ উদযাপন করবেন। মাইটকুমরা গ্রামের আবুল হাসান শেখ বলেন, তাদের গ্রামের কিছু মানুষ আজ ঈদ পালন করছেন। বাকিরা আগামীকাল করবেন।
শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ জানান, এখানকার কিছু মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেন। এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের অংশ।
ঢাকা/সাহাব/রেজাউল/তামিম/মোসলেম/শহীদুল/এনাম/সোহাগ/রতন/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব র ন ম জ অন ষ ঠ ত সদর উপজ ল উপজ ল র র র উপজ ল র ম হ ম মদ পর ব র য় ঈদ র এল ক য় ন কর ন ঈদগ হ মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ