দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে বাজেট বাস্তবায়ন হার সামান্য বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের হার আগের অর্থবছরের চেয়ে দুই দশমিক ৩৩ ভাগ বেড়েছে। 

অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ২৬ শতাংশ। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে গত অর্থবছরের তুলনায় বাজেট বাস্তবায়ন হার ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসের বাজেট বাস্তবায়নের হার চূড়ান্ত করেছে।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট পরিচালন তথা অনুন্নয়ন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ পরিশোধে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে, ৩৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে বেতন-ভাতা খাতে ২১ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ১২ শতাংশ, কৃষি খাতে ৮ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে ৭ শতাংশ এবং পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে।  

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে একই সময়ে এডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৭০১ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়ন হার ছিল ১৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার সামান্য কমেছে।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, মূল বাজেটে ঘোষিত ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

এছাড়া, এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে ৩ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশ) এবং কর-বহির্ভূত রাজস্ব খাত থেকে ৩২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ৭০.

৬ শতাংশ) আদায় হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা (জিডিপি’র ০.৫২ শতাংশ)। মূল বাজেটে সার্বিক ঘাটতির প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপি’র ৪.৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছর একই সময়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩২১ কোটি টাকা (জিডিপি’র ০.১৫ শতাংশ)।

বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে সরকার মোট ৩১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।

সে সময় সরকারের ঋণ গ্রহণ ও ঋণ পরিশোধের তথ্য অনুযায়ী, ছয় মাসে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিট ১৭ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ৬২ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ এবং অন্যদিকে ২৯ হাজার ১২৩ কোটি টাকা স্বল্প মেয়াদি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থা সরকারের নিট ঋণ নিয়েছে ৩৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। এছাড়া, ব্যাংক-বহির্ভূত বিভিন্ন উৎস থেকে গৃহীত ঋণের ১৪ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ এবং সঞ্চয়পত্র খাতে ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার।    

অন্যদিকে, আলোচ্য সময়ে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে নিট বৈদেশিক অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এ সময়ে সরকার বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ২৮ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ এবং ১৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে বলে অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ম ণ ছ ল পর স খ য ন উৎস থ ক য় হয় ছ পর শ ধ সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা  সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার। 

সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।

এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি
  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি