দ্বন্দ্বের অবসান, বাটলারের অনুশীলনে বিদ্রোহী ফুটবলাররা
Published: 8th, April 2025 GMT
চল্লিশ মিনিটের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। যেখানে বিদ্রোহী ১৩ ফুটবলারের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার, যাঁর সঙ্গে দ্বন্দ্বে আন্দোলন করেছিলেন সাবিনা খাতুনসহ ১৮ খেলোয়াড়। দুই পক্ষের সমঝোতা বৈঠকেও ছড়িয়েছে উত্তেজনা। এক পক্ষ দোষারোপ করেছে অন্য পক্ষকে। নানা ইস্যুতে বাগ্বিতণ্ডার পর শান্তির পতাকা ওড়ান ব্রিটিশ কোচ বাটলার। শিষ্যদের উদ্দেশে ৫ মিনিটের সমাপনী বক্তৃতায় সব ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। শিক্ষকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিদ্রোহীরা যোগ দিয়েছেন অনুশীলনে।
এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬৮ দিন পর দেশের নারী ফুটবলে বিদ্রোহের অবসান হলো। গতকাল জিম সেশনের পর আজ সকাল ছয়টায় ধানমন্ডির আবাহনী লিমিটেডের মাঠে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল, যেখানে কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা বেশির ভাগ ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বাটলারের অধীনে অনুশীলন করবেন বলে গতকাল সমকালকে নিশ্চিত করেছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদ্রোহী ফুটবলার, ‘কালকে (আজ) মাঠে আসেন। অনেক দিন পর আমরা অনুশীলন করতে যাচ্ছি।’
নেপালে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে কোচের সঙ্গে বৈরিতা সাবিনা-সানজিদাদের। শিরোপা জিতলেও সে রেশ কাটেনি। পুনরায় বাটলারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর জানুয়ারির শেষ দিকে তাঁর অধীনে অনুশীলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন ১৮ নারী ফুটবলার। কোচের বিরুদ্ধে বডি শেমিংসহ নানা অভিযোগ তোলেন তারা। কোচও সাত ফুটবলার থাকলে দায়িত্ব পালন করবেন না বলে হুমকি দেন। মাঝে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে অসন্তোস অনেক দূর গড়িয়েছে।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে নমনীয় হওয়া মেয়েরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে বলে দাবি করেন নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। সেই দাবির সত্যতা এখন মিলেছে। তবে অনুশীলনে ফেরার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কৃষ্ণা রানী সরকার-ঋতুপর্ণা চাকমাদের দাবি ছিল টেবিলে বসতে হবে দুই পক্ষকে। রোববার ক্যাম্পে যোগ দিলেও গতকাল বাটলারের অধীনে সকালে জিম সেশনে অংশ নেননি বিদ্রোহীরা। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। যেখানে সহকারী কোচ থেকে শুরু করে বাফুফের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
অধিনায়ক সাবিনা, মাতসুশিমা সুমাইয়া, ঋতুপর্ণা ও মনিকা চাকমা ভুটানের লিগে খেলতে গিয়েছেন। বোন অসুস্থ হওয়ায় তহুরা খাতুন যোগ দেননি ক্যাম্পে। আন্দোলন করা শিউলি আজিম, মোসাম্মাৎ সাগরিকা, রুপনা চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সানজিদা আক্তার, নিলুফা ইয়াসমিন, মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার সিনিয়র, কৃষ্ণা রানী, স্বর্ণা রানী মণ্ডল, সাথী বিশ্বাস ও নাসরিন আক্তার ছিলেন বৈঠকে। বাটলার-কৃষ্ণাদের আধা ঘণ্টার বেশি সময়ের আলোচনায় ছিল ঘটে যাওয়া নানা সংকটের বিষয়। বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকজন ফুটবলার সোমবার সমকালের কাছে কোচের সঙ্গে আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
বেশ কয়েকজন ফুটবলার ছাড়াও আন্দোলনের সমালোচনা করে মেয়েদের দোষারোপ করেন বাটলার। আবার মেয়েরাও তাদের সঙ্গে ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণগুলোর যুক্তি তুলে ধরে। আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে যা হয়েছে, তা যেন পুনরায় না ঘটে সেই জন্য মিডিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন ফুটবলাররা। এক নারী ফুটবলার বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। কোচ আমাদের বলেছেন সব ভুলে যেতে। আমরাও পুরোনো বিতর্ক বয়ে বেড়াতে চাচ্ছি না। এই জন্য আপনাদের (মিডিয়া) সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। নতুনভাবে শুরু করতে চাই।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অনুসারীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
সেখানে বিক্ষোভকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিবাদ মিছিলও করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার মধুপুর-লক্ষীপুর এলাকাতেও সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের দাবি, সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বদলে এখানে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সোহরাব উদ্দিনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।
এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুনেছি আমার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি।’ এর বেশি কথা বলেননি তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে এ নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন, তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হাসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
কুষ্টিয়ার অন্য তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি।