ডিলারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ব্যবসা গুটিয়েছেন ৫১ বিক্রেতা
Published: 10th, April 2025 GMT
সাদুল্লাপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলন আসার আগ পর্যন্ত জমিতে তিনবার ইউরিয়া সার দিতে হবে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্বে সার পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এ কৃষককে।
জাহিদুল ইসলাম জানান, ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে ইউরিয়া সার কিনতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন খরচ ও সময়ের অপচয় হয়।
জাহিদুল ইসলামের মতো সার কিনতে অনেক কৃষককে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এলাকাভিত্তিক খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য তারা ডিলারদের অসহযোগিতার কথা বলছেন।
খুচরা ইউরিয়া সার বিক্রেতা বড় জামালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম মিঠু ও নলডাঙ্গার দশলিয়া বাজারের বিপুল হোসেন জানান, এ ব্যবসায় প্রাপ্য সম্মানটুকু নেই। তাদের প্রতিপক্ষ মনে করেন বিসিআইসি ডিলাররা। তারা কমিশন দিতে টালবাহানা করেন। নানা ছুতোয় সার দিতে দেরি করেন। নানা ঝক্কি পোহানোর পর সার নিয়ে নির্ধারিত পয়েন্টে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ দিতে হয়। এতে লাভ থাকে না।
অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভাতগ্রাম ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মণ্ডলসহ কয়েকজন ডিলার। তাদের ভাষ্য, খুচরা বিক্রেতারা বাকিতে সার নেওয়ার আশায় থাকেন। বিনা পয়সায় সার নিয়ে মজুত করে রাখেন। সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। তাদের এ সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে ব্যবসায় টিকতে পারেননি। এসব কারণে আমরাও কৃষকের কাছে সরাসরি সার বিক্রি করতে আগ্রহী।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ হয়েছে। এসব জমির জন্য চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৫০০ টন। উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত ১৮ জন ডিলার আছে। তারা এগারো ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে সার বিক্রি করেন। বরাদ্দ সারের ৭৫ ভাগ থাকবে ডিলারের কাছে। ২৫ ভাগ পাবেন খুচরা বিক্রেতারা। কৃষকদের সুবিধার জন্য এখানে ৯৯ জন খুচরা সার বিক্রেতা (সাব ডিলার) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা কৃষি বিভাগের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জামানত রেখে ডিলারদের কাছ থেকে কমিশনে ইউরিয়া নেন। সেই সার নির্ধারিত পয়েন্টে নিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করেন। ডিলারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে খুচরা বিক্রেতারা ব্যবসা ছেড়ে জামানত ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মাত্র ৪৮ জন খুচরা বিক্রেতা আছেন। তারাও ব্যবসা ছেড়ে জামানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছেন। এসব কারণে কৃষকের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সার বিক্রির বিধান রাখা হয়েছে। এখানে ডিলারের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার দ্বন্দ্ব প্রকট। তাদের ঝামেলায় কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সারের জন্য দূরে যেতে হচ্ছে কৃষকদের।
জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ইউনিয়নটি বড় এলাকাজুড়ে। অথচ এখানে সার বিক্রির জন্য ডিলার মাত্র একজন। তিনি দোকান খুলে বসেন নির্ধারিত একটি বাজারে। দূরের গ্রামের অনেক কৃষক ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সার নিতে আসেন। এখানে সার বিক্রির জন্য খুচরা বিক্রেতা বাড়ানো প্রয়োজন।
কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ইউরিয়া সারের সরবরাহ আছে। ডিলার আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলে কৃষক পর্যায়ে সহজে সার পৌঁছানো যেত।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ বন দ ব ক ষকদ র ল ইসল ম র জন য ইউর য় ব যবস উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি নেতাকে মারধর, খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি কারাগারে
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলমের করা মামলায় সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন হাসান আল মামুন। খুলনা মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে আদালত চত্বরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা মামুনকে লক্ষ্য করে ডিম ও পচা আম নিক্ষেপ করেন। তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। পরে নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন সেনা সদস্যরা।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ কে এম শহিদুল আলম বলেন, মামলাটিতে উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন হাসান আল মামুন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে রোববার খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। আমরা জামিনের বিরোধিতা করি। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় তৎকালীন ওসি মামুন নিজেই
ফখরুল আলমকে বেদম মারধর করেন। লাঠির আঘাতে ফখরুল আলমের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট মামুনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন ফখরুল।