রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন। তবে দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো, পরিবেশ উন্নত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মত এক। সে জন্য তারা নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে ব্রুশিয়ার উপহার দিয়েছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের।

বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনের আয়োজন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এ সময় তিনি কোন দেশের বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা তুলে ধরেন।

সম্মেলনে গত তিন দিন বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বারবার জানতে চেয়েছেন, বিদ্যমান নীতির ধারাবাহিকতা থাকবে কিনা। এ বিষয়ে সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির কাছে তারা জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘তিনটি দলের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা মিটিং করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে দল তিনটি। তারা নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে ব্রুশিয়ার, নথি ও উপহার দিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের।

এর আগে কোনো বিনিয়োগ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাদা বৈঠক করার সুযোগ দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিজস্ব মতামত শেয়ার করতে পেরেছে প্রতিটি দল। বিনিয়োগকারীরাও আলাদাভাবে দলগুলোকে প্রশ্ন করেছে– বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার করছে, আপনারা ক্ষমতায় এলে সেগুলোর ধারাবাহিকতা রাখবেন কিনা? এ বিষয়ে দলগুলো কী উত্তর দিয়েছে, সেটি বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন করলে জানা যাবে। তবে সাধারণত দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে সবার মত এক। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার বিষয়েও সবার লক্ষ্য এক। কারণ, এই মুহূর্তে দেশে বিনিয়োগ দরকার। অতএব, এখানে কারও ভিন্ন মত দেখানোর কারণ নেই।’

এর আগে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার অন্য দেশের তুলনায় কম। এটিকে একটি মানসম্মত অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। সে জন্য আইএলওর সঙ্গে বিডা একটি সমঝোতা স্মারক করেছে। কারণ, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে একসময় ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। চীনের হান্দা ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির সঙ্গে আরেকটি এমওইউ করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই বিনিয়োগ এলে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আগামী মাসে ২০০ বিনিয়োগকারীসহ বাংলাদেশ সফরে আসবেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী। জার্মানির বিনিয়োগকারীরাও আসতে চান। 

তিনি বলেন, আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড গ্রুপ বাংলাদেশের মাতারবাড়ীর কাছাকাছি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে তাদের কারিগরি সহযোগিতা নিতে চেয়েছে বাংলাদেশ। খুঁটিনাটি জানতে বাংলাদেশ থেকে একটি দল সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবে। ডিপি ওয়ার্ল্ড গ্রুপ হচ্ছে বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো স্পেনের পোশাক জায়ান্ট ইন্ডিটেক্সের প্রতিনিধি বাংলাদেশ এসেছেন। তারাও ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী। বাংলাদেশের সঙ্গে তারা সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চান। লাফার্জহোলসিমেরও একটা বড় বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা আছে। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগের জন্য সরকারের পরিকল্পনা আছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সামরিক বাহিনীতে কিছু কাজ করা দরকার। এ খাতে যন্ত্রপাতি তৈরির সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগকারী খোঁজার চিন্তা আছে। ভবিষ্যতে সামরিক অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে পারে।

তিনি বলেন, এ সম্মেলনে কত টাকা বিনিয়োগ এলো, তা মুখ্য নয়। দ্বিতীয় বিনিয়োগ সম্মেলনে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে। তবে এবারের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের যে নেতিবাচক প্রচার এতদিন ধরে হয়ে আসছে, সেটিকে ইতিবাচক করে তুলে ধরা। ভবিষ্যতে এত বড় করে বিনিয়োগ সম্মেলন দরকার নেই। নির্দিষ্ট দেশ নির্ধারণ করে তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিনিয়োগ আনতে পারলে ভালো হয়।

আশিক চৌধুরী বলেন, এবারের সম্মেলনে এমন সাড়া পাওয়া গেছে যে অনেককে জায়গা দেওয়া যায়নি। অনেকে জায়গা না পেয়েও এসেছেন বিনিয়োগকারীদের দেখা পেতে। সে জন্য আগামীতে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই, প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব: বাণিজ্য উপদেষ্টা

১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।  ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা প্রথম আলোকে জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে প্রত্যাশা করেছিলাম।’

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে নতুন এই হার ঘোষণা করা হয়। সবশেষ বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। সে হিসাবে শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণায় করা হয়েছে।

ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আদেশে বাংলাদেশ ছাড়াও কয়েক ডজন দেশের ওপর মার্কিন শুল্কের হার তুলে ধরা হয়েছে। বাকি দেশগুলোর মধ্যে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ,পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ,  ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।

আজ থেকে বাংলাদেশকে বর্তমানের গড় ১৫ শতাংশ ও নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে হবে।

পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছে। শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে টানা তিন দিন আলোচনা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। মঙ্গল ও বুধবারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ ছাড়াও দলে ছিলেন—জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।

আরও পড়ুন১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ ১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ