রাতে ভাড়া নিয়ে গিয়েছিলেন অটোরিকশাচালক, দুপুরে লাশ মিলল কবরস্থানে
Published: 10th, April 2025 GMT
রাতে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক বাবর হোসেনের (২০)। গতকাল বুধবার রাত থেকে স্বজনেরা যোগাযোগ করেও বন্ধ পাচ্ছিলেন তাঁর মুঠোফোন। পরে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালী সদর উপজেলার কোম্পানিঘাট-সংলগ্ন স্লুইসগেট এলাকার একটি কবরস্থান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
খবর পেয়ে বেলা ২টার দিকে সুধারাম থানার একদল পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। নিহত বাবর নোয়াখালী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো.
নিহত বাবর হোসেনের খালাতো ভাই মো. রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আর বাবর একই মালিকের গ্যারেজের মিশুক অটোরিকশা চালাতেন। গতকাল রাত ৯টার দিকে বাড়ির পাশে তাঁর সঙ্গে বাবরের সর্বশেষ দেখা হয়। তখন বাবর তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিনি ভাড়া নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা বাবরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেন।
রাজীব জানান, বাবরের খোঁজে সারা রাত তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় যান। একপর্যায়ে দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাঁর মুঠোফোন খোলা পান। তখন অপরিচিত এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন, তিনি ফোনটি শহরের সোনাপুর এলাকায় পেয়েছেন। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে সোনাপুর যান। কিন্তু ওই ব্যক্তি ফোনটি বন্ধ করে দেন। তাঁরা সেখানে গিয়েও আর ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে পারেননি।
স্বজনেরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাবরের বড় বোন রুনা আক্তার সুধারাম থানায় যান এ ঘটনায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে। তখনই খবর পান নোয়াখালী ইউনিয়নের কোম্পানীঘাট এলাকার স্লুইসগেট–সংলগ্ন একটি কবরস্থানের পেছনে একটি লাশ পাওয়া গেছে। পরে তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন লাশটি বাবরের। লাশের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল, গলায় কালো দাগ দেখেছেন তাঁরা। পরে তাঁরা পুলিশকে বিষয়টি জানান।
জানতে চাইলে অটোরিকশাচালকের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই অটোরিকশাচালক গতকাল রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তবে এ বিষয়ে পরিবার থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। ঘটনাটি তদন্তে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত