‘ইচ্ছাকৃত আউট’ বিতর্কে তদন্তে নেমেছে বিসিবি
Published: 10th, April 2025 GMT
ডিপিএলে বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের দুই ব্যাটারের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত আউট হয়ে ম্যাচ হেরে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে মাত্র ১৭৮ রান তাড়া করতে নেমে শাইনপুকুর ৫ রানে হারে।
ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এক বিবৃতি দিয়ে বিসিবি জানিয়েছে, বোর্ড দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে স্থির আছে এবং ডিপিএলের বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
বিবৃতিতে বিসিবি বলেছে, ‘খেলায় সততা এবং সর্বোচ্চ নৈতিক মান বজায় রাখতে বিসিবি বদ্ধপরিকর। খেলাধুলার চেতনার সঙ্গে আপস করতে পারে এমন যেকোনো ধরনের দুর্নীতি বা অসদাচরণের প্রতি বোর্ডের জিরো-টলারেন্স নীতি রয়েছে।
বিসিবি দুর্নীতি দমন ইউনিট (এসিইউ) এবং লিগের টেকনিক্যাল কমিটি এরই মধ্যে (ডিপিএল) ম্যাচ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত শুরু করেছে। বিসিবি এর আওতাধীন সকল ক্রিকেটীয় কার্যক্রমে ন্যায্যতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ও তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অভিযোগ ওঠা ম্যাচে গুলশানের বিপক্ষে শাইনপুকুরের দুই ব্যাটার ইচ্ছাকৃত আউটের অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে দেখা গেছে, শাইনপুকুরের এক ব্যাটার ডাউন দ্য উইকেটে এসে বল খেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে স্টাম্পিং হন। তার ক্রিজে ফিরে যাওয়ার কোন চেষ্টা ছিল না।
এরপর শেষ ব্যাটার মিনহাজুল আবেদিন ডাউন দ্য উইকেটে আসেন। ক্রিজে ফিরে যাওয়ার যথেষ্ট সময়ও পান। গুলশানের উইকেটরক্ষক দ্রুত বল ধরে স্টাম্পিং করতে পারেননি। এটা দেখে ব্যাটার মিনহাজুল পপিং ক্রিজে ব্যাট দিতে গিয়েও ব্যাট সরিয়ে আনেন এবং বাইরে ব্যাট ছোঁয়ান। তিনি আউট হলে হেরে যায় শাইনপুকুর। এই ঘটনায় সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিরস্কার জানিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড প এল শ ইনপ ক র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
বাস্তবায়িত হোক শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন ১ মে। মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। সেই আত্মদানের পথ ধরেই পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমজীবী মানুষ ন্যায্য মজুরি, মানবিক আচরণ, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে এখনো আন্দোলন করছেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে আছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে-কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেনি বলে শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা দিনরাত অমানুষিক পরিশ্রম করে যে মজুরি পান, তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিকদের অসামান্য অবদান সত্ত্বেও তাঁরা ন্যায্য মজুরি ও সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মজুরি সবচেয়ে কম। তৈরি পোশাকশিল্পসহ কিছু খাতে ন্যূনতম মজুরি বেঁধে দেওয়া হলেও অনেক খাতে নির্দিষ্ট মজুরি নেই। কম মজুরি দিয়ে ও অনিরাপদ কর্মপরিবেশে রেখে শ্রমিকদের কাছ থেকে উপযুক্ত কাজ আশা করা যায় না।
এবার বাংলাদেশে শ্রমিক দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন পরিবেশে। গত বছর আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হওয়ার পর শ্রমিকদের সামনে যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সূত্র অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে বিজিএমইএর সদস্য, এমন ১১৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে কাজ হারিয়েছেন ৯৬ হাজার ১০৪ জন। অন্য খাতের শিল্পকারখানার খবর আরও উদ্বেগজনক।
শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার কমিশন তিন বছর পরপর শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ, অবকাশ, বার্ষিক মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে মজুরি সমন্বয়, ট্রেড ইউনিয়নের শর্ত শিথিল করা ও মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করাসহ শ্রমিকদের সুরক্ষায় অনেকগুলো সুপারিশ করেছে।
যেসব কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন ও রাজনীতি জড়িত, তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। কিন্তু আরও অনেক কমিশনের মতো শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে শিগগিরই শ্রম আইন সংশোধন করা হবে। শ্রম আইন সংশোধন হলে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়।
মে দিবস উপলক্ষে রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। কিন্তু এসব কর্মসূচি যেন নিছক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমিত না থাকে। বাংলাদেশে মে দিবস পালন তখনই সার্থক হবে, যখন শ্রমিকেরা সব ধরনের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত হবেন। মালিকদেরও মনে রাখতে হবে, শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের বিকাশ কিংবা অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করা যাবে না। শ্রমিক বাঁচলেই শিল্প বাঁচবে, আর শিল্প বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত হোক।