সিরাজগঞ্জে যুবদলের ৭ নেতাকে সকালে বহিষ্কার, রাতে প্রত্যাহার
Published: 17th, April 2025 GMT
দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা যুবদলের কয়েকটি ইউনিটের ৭ নেতাকে বুধবার সকালে বহিষ্কার করা হয়। আবার রাতেই তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সংগঠন পরিচালনা করার অভিযোগে সিরাজগঞ্জ জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল আমিন খান ও সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান মুরাদকে শোকজ করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত পত্রে এ তথ্য জানানো হয়।
৭ নেতা হলেন- বেলকুচি উপজেলা যুবদলের সাবেক সদস্য পল্টন জোর্য়াদার, হাফিজুল ইসলাম, পৌর যুবদলের সাবেক সদস্য উজ্জল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মো.
জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবুর মৃত্যুজনিত কারনে এই নিদের্শনার মাত্র একদিন আগে আল আমিন খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো পদে দায়িত্বে থেকেও নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিষয়টি আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে এর জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
অপরদিকে, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা যুবদলের কয়েকটি ইউনিটের ৭ নেতাকে বুধবার সকালে বহিষ্কারের পর আবার রাতেই তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক মাসুম রেজা মুসা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বহিস্কারের তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হলেও কর্ণপাত না করায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সর্ম্পক না রাখতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাদের অপরাধের দায়িত্ব সংগঠন নেবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এরপর রাতে জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল আমিন খান ও সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান মুরাদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ওই ৭ নেতার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্যও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ য বদল ক ন দ র য় কম ট স ব ক সদস য স র জগঞ জ য বদল র স
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’
নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।
বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’
হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’
তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপকাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।
এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।
সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।
তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।
নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল