সিরাজগঞ্জে স্ত্রীর কথিত প্রেমিককে ফাঁসাতে বন্ধুকে হত্যা করেন স্বামী
Published: 22nd, April 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ট্রাকচালক রাশেদুল (৪০) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভাষ্য, স্ত্রীর কথিত প্রেমিককে ফাঁসাতে বন্ধু রাশেদুলকে গলা কেটে হত্যা করেছেন গ্রেপ্তার সেলিম হোসেন (৩৮)।
গতকাল সোমবার রাতে জেলার ডিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরামুল হোসাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওই ঘটনায় গত রোববার তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের নিজ এলাকা থেকে সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামি সেলিম জানিয়েছেন, আউয়াল নামের একজনের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান তাঁর স্ত্রী। একপর্যায়ে স্ত্রী তাঁর প্রেমিকের কাছে চলে যান। তাঁদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ না হওয়ায় আউয়ালের ওপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন সেলিম।
হত্যার শিকার পিকআপ ভ্যানের চালক রাশেদুলের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায়। তবে তিনি সিরাজগঞ্জে তাড়াশ উপজেলার পশ্চিম ওয়াপদা বাঁধ এলাকায় বাস করতেন। রাশেদুলের সঙ্গে সেলিমের ভালো সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে সেলিম এক দিন তাঁর ঘরে স্ত্রীর ব্যাগে আউয়ালের মানিব্যাগ খুঁজে পান। এতে একটি সিমের কাগজ, আউয়ালের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ছিল। সেলিম মানিব্যাগটি রেখে দেন এবং রাশেদুলকে হত্যার পর লাশের পাশে মানিব্যাগটি ফেলে রেখে আউয়ালকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন। ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেলিম ঘুমের ওষুধ মেশানো কোমল পানীয় ও ছুরি নিয়ে বের হন। তিনি মদ খাওয়ার কথা বলে রাশেদুলকে ডেকে নেন। এরপর তাঁকে ঘুমের ওষুধ মেশানো পানীয় খেতে দেন। কিছুক্ষণ পর রাশেদুল সংজ্ঞা হারালে কোমরের গুঁজে রাখা ছুরি বের করেন সেলিম। একপর্যায়ে রাশেদুলকে গলা কেটে হত্যা করেন তিনি।
১৯ এপ্রিল সকালে আসানবাড়ি এলাকার একটি ধানখেতের পাশ থেকে রাশেদুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনেরা তাড়াশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
জেলা ডিবির ওসি একরামুল হোসাইন জানান, আদালতের নির্দেশে সেলিমকে গতকাল বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ র শ দ লক আউয় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর তেলের দামে অস্থিরতা
ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আজ শুক্রবার ইসরায়েল হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এতে জ্বালানির তেলের জোগানে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারস ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ মার্কিন ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়, যা গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এ ছাড়া মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ দশমিক ৪৩ ডলার বা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭৪ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৭ দশমিক ৬২ ডলারে উঠেছিল, যা কিনা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মানে হচ্ছে দুনিয়াজুড়ে সুপারমার্কেটে খাবারের দাম, গাড়িতে তেল ভরার খরচ, পরিবহন ব্যয়—সবকিছুর দাম বাড়বে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, ‘এখনই বলা কঠিন, তবে সম্ভবত হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সবাই উদ্বিগ্ন।’
হরমুজ প্রণালি বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ। বিশ্বের মোট জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়েই সরবরাহ হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস উৎপাদক দেশগুলো এই পথ দিয়েই তাদের জ্বালানি বিশ্ববাজারে পাঠায়। উত্তরে ইরান, দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঘেরা হরমুজ প্রণালি উপসাগরীয় অঞ্চলকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমএসটি মারকুইয়ের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান যদি আঞ্চলিক জ্বালানি তেল পরিকাঠামোতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও জানান, চরম পরিস্থিতিতে ইরান অবকাঠামোতে হামলা বা হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইসরায়েলকে এ হামলার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে।
এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলা একতরফা পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, এতে ওয়াশিংটনের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তবে তেহরানকে সতর্ক করে তিনি বলেন, তারা (তেহরান) যেন মার্কিন স্বার্থ বা ব্যক্তিদের লক্ষ্য না করে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফিলিপ নভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেবা বলেন, ইরান পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে শুধু তেলের সরবরাহ বিঘ্ন ঘটাবে না, আশপাশের অন্যান্য তেল উৎপাদকদের দেশগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।