সড়কে রশি ফেলে বাইকের গতিরোধ, বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা
Published: 22nd, April 2025 GMT
ফেনীর সোনাগাজীতে সড়কে রশি ফেলে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে আবুল হাশেম (৫৫) নামে এক বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ মঙ্গলবার ভোর ছয়টার দিকে সোনাগাজী উপজেলার ওলামা বাজারের সাজেদা ফাউন্ডেশন সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
আবুল হাশেম উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামের আব্দুর শুক্কুরের ছেলে এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
পুলিশ, স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার জানায়, জমিজমা ও পারিবারিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে আবুল হোসেন গংদের সঙ্গে একই গ্রামের বেলাল হোসেন গংদের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। উভয় পরিবারের দ্বন্দ্বে ২০২১ সালের ৩১ মে ভোরে আমির হোসেন ননা মিয়ার ভাই কৃষক বেলাল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আমির হোসেন ননা মিয়া বাদী হয়ে হাশেমসহ দশজনকে আসামি করে মামলা করেন। এতে হাসেমসহ বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফেরেন। জুলাই আন্দোলনে ফেনীর একটি হত্যা মামলায় আমির হোসেন ননা মিয়াকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় নানা মিয়া আদালত থেকে জামিন নেন। এ ঘটনায় হাসেম গংকে দায়ী করেন ননা মিয়া। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার ভোর ছয়টার দিকে হাশেম মোটরসাইকেলে সোনাগাজী পৌর শহর থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। উপজেলার ওলামা বাজারের সাজেদা ফাউন্ডেশন এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা ১০-১৫ জন দুর্বৃত্ত সড়কের ওপর রশি ফেলে তার মোটরসাইকেলের গতিরোধের চেষ্টা করে। এ সময় হাশেম পড়ে যান। তখন দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হাশেমকে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখান থেকে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে তিনি মারা যান।
সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র জামাল উদ্দিন সেন্টু বলেন, ‘আবুল হাশেম বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। শুনেছি জমি সংক্রান্ত বিরোধে তাকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যম খুনিদের চিহ্নিত করা হোক।’
সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বায়েজিদ আকন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক প য় হত য ব এনপ ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫