জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদের নামে যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানিতে থাকা শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরে জেমকন গ্রুপের মালিক ও যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, তাঁর দুই ভাই, এক বোন ও মা এবং মৃত বাবার নামে থাকা সাতটি বাড়ি ও চারটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পঞ্চগড়ে থাকা এই পরিবারের আরও জমি ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্টটা এলএলসি নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে কাজী আনিস আহমেদের শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ৬১ লাখ ৩৯ হাজার ৩১ মার্কিন ডলার।

দুদক লিখিতভাবে আদালতকে বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই জেমকন গ্রুপের এই পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড়ে ১৭৫টি দলিলে কেনা কাজী নাবিল আহমেদের জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ধানমন্ডিতে তাঁর ছয়তলা একটি বাড়ি ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে। কাজী নাবিল আহমেদের বাবা কাজী শাহেদ আহমেদের নামে থাকা তিনটি বাড়ি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। নাবিলের মা আমিনা আহমেদের নামে থাকা ধানমন্ডিতে তিনটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া কাজী আনিস আহমেদের নামে ধানমন্ডিতে থাকা ছয়তলা বাড়ি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর বাইরে ধানমন্ডিতে কাজী ইনাম আহমেদের নামে থাকা বাড়ি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আর গুলশানে একটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১৩ মার্চ নাবিল আহমেদ, তাঁর দুই ভাই, এক বোন, মা, মৃত বাবাসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা ৩৬টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জেমকন গ্রুপের ৩৬টি কোম্পানির ৪ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮টি শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের দাম ৬০ কোটি ৪৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জেমকন গ্রুপের কাজী নাবিল আহমেদ, তাঁর দুই ভাই ও মা এবং মৃত বাবাসহ ১০ জনের নামে থাকা ১১৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, কাজী নাবিল আহমেদের ২১টি ব্যাংক হিসাব, তাঁর ভাই আনিস আহমেদের ২০টি, কাজী ইনাম আহমেদের ১০টি এবং তাঁদের মা আমিনা আহমেদের নামে থাকা ২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এর বাইরে কাজী নাবিল আহমেদের মৃত বাবার নামে থাকা সাতটি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া কাজী নাবিল আহমেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট পাঁচজন মালিয়া মান্নান আহমেদ, কাজী সিরাজ আহমেদ, লতিফা মান্নান ইসলাম, রাইয়াদ জায়েদ মান্নান ও আবু মুসার নামে থাকা ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি কাজী নাবিল আহমেদ, তাঁর দুই ভাই ও তাঁদের মায়ের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। দুদকের পক্ষ থেকে সেদিন আদালতকে বলা হয়েছিল, জেমকন গ্রুপের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক জালিয়াতি ও অন্যান্য দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব ল আহম দ র জ মকন গ র প র আহম দ র ন ম ধ নমন ড ত র অবর দ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ