কুমিল্লায় কাউন্সিল চলাকালে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেলে লাকসামের আজগরা হাজী আলতাব আলী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ইউনিয়ন বিএনপির ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিলর চলাকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ১০ জন আহত হন। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কাউন্সিল চলাকালে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আজগরা ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আব্দুল সালাম গ্রুপ ও উপজেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশীদের সমর্থকদের মাঝে হঠাৎ চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। পরে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হন। আহতদের মধ্যে শিহাব, নুরু, আনোয়ার, মাইন উদ্দিন ও হাবিবের নাম জানা গেছে। সংঘর্ষের ১ ঘণ্টা পর আবার কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়।

ঘটনার বিষয়ে রাতে লাকসাম উপজেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল সালাম বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, অনুষ্ঠান চলাকালে ছাত্রলীগ যুবলীগের কিছু লোক হট্টগোল করলে আমাদের লোকেরা তাদের তাড়িয়ে দেয়।  

লাকসাম উপজেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ বলেন, প্রোগ্রামের প্যান্ডেলের বাইরে ছাত্রদল ও যুবদলের মাঝে ভুল বুঝাবুঝিতে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে তা সমাধান হয়ে যায়। 

লাকসাম উপজেলা বিএনপি সদস্যসচিব আব্দুর রহমান বাদল বলেন, সম্মেলনের বাইরে কি হয়েছে আমার জানা নেই। ভেতরে সুষ্ঠুভাবে সম্মেলন হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র ব এনপ র উপজ ল র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রফেসর সাহেব

ছোটবেলা থেকে আমরা তাঁর এই নামই শুনতাম। কেননা আমাদের দেখা জানা সব লোকজন তাঁকে ‘প্রফেসর সাহেব’ নামেই ডাকতেন। বেশ কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা সূত্রে তাঁর এই পরিচয় তৈরি হয়। ছোটবেলায় রাগী, গম্ভীর ভাবমূর্তির এই মানুষের কাছাকাছি যাবার সাহস আমাদের ছিল না। তিনি আমাদের পিতা প্রফেসর মো. আজগর আলী (১৯২৭-২০০৩)। বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজের জীবনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন, মৃত্যুর পর তাঁর সেসব নোটবই আমাদের হাতে আসে। পূর্ববাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া একজন মানুষ কঠিন প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে কীভাবে নিজের জীবন তৈরি করেছিলেন, ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন– সেসব টুকরো লেখা থেকে এর কিছু চিত্র পাওয়া যায়।
প্রফেসর সাহেবের বাবা নাহের মুন্সী ছিলেন ক্ষুদ্র কৃষক, সেই সঙ্গে তিনি গ্রামের মসজিদে ইমামতি করতেন; মা সহিতুননেসা ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী, কম উপার্জনে বেশি মানুষের সংসার সামাল দিতে তাঁকে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হতো। দাদা মহর মুন্সী বেশির ভাগ সময় পীরের দরবারেই থাকতেন, ওয়াজ মাহফিলেই তাঁর বেশি সময় কাটত, সংসারের কাজে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। 
সে সময় গ্রামে স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। মেট্রিক পাস করলেই দূর থেকে মানুষ আসত দেখতে। এরপর আরও শিক্ষার কথা ভাবাই ছিল দুঃসাহসিক ব্যাপার। তাঁর আরামে লেখাপড়া করার উপায় ছিল না। বেশির ভাগ সময় পিতার সঙ্গে ক্ষেতে কাজ করতে, বিলে মাছ ধরতে যেতে হতো। এর মধ্যেও পড়াশোনার আগ্রহ কমে না। স্কুলের ছাত্র থাকাকালেই তিনি জুনিয়র মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। 
অভাবসহ কঠিন বাধাবিপত্তির সঙ্গে অবিরাম লড়াই করে আব্বা মেট্রিক পাস করেন ১৯৪৪ সালে। পরিবারের মুরব্বিরা চাচ্ছিলেন তিনি কোনো কাজে যোগ দিয়ে সংসারের হাল ধরবেন; কিন্তু তাঁর ইচ্ছা লেখাপড়া করা। 
এই অভাব-অনটনের মধ্যেই ঢাকা দেখার আগে শিক্ষার টানে তাঁর কলকাতায় যাওয়া। সেখানে প্রথমে ভর্তি হলেন কমার্স কলেজে। টাকার অভাবে এই কলেজেও পড়া হলো না। সে সময় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, তার কারণে কলকাতার জীবন আরও অনিশ্চিত। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম আয়ও জোগাড় হচ্ছে না। বেকারত্ব আর যুদ্ধের আক্রমণ একসঙ্গে।
আইকম পাস করার পর তিনি ভর্তি হলেন সিটি কলেজে। নতুন কাজ পেলেন রেন্ট কন্ট্রোল অফিসে। কিছুদিনের মধ্যে চাকরি পেলেন কলকাতা করপোরেশনে। সব সংকট পার হয়ে যখন স্থিত হয়েছেন তখনই বিপদ এলো আরেক দিক থেকে। তিনি লিখেছেন, ‘সবকিছুই ঠিকঠাক চলিতে লাগিল। কিন্তু ডাইরেক্ট অ্যাকশনে আমার কপাল ভাঙিল। রায়ট আরম্ভ হইল। এত লোক মারা গেল তাহা কল্পনা করা যায় না। কলিকাতার ড্রেনে পানি প্রবাহিত হয়, সেখানে রক্ত প্রবাহিত হইতে দেখিয়াছি।’
দেশভাগের পর শুরু হলো জীবনের আরেক পর্ব। তিনি লিখেছেন, ‘বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর ঢাকায় আসিলাম কিন্তু মনে হইল কলিকাতার আলো হইতে ঢাকার অন্ধকারে আসিলাম। ঢাকায় আসিয়া কোনো কিছুই ঠিকমতো করিতে পারিতেছিলাম না। না আছে চাকুরী না আছে পড়াশোনার ব্যবস্থা, না আছে টাকা পয়সা।... তবে কলিকাতার মৃত্যু ভয় হইতে বাঁচিলাম। ক্রমে ক্রমে ঢাকা ভালো মনে হইতে লাগিল। কেন হইবে না? ইহা যে আমার নিজের দেশ, বাংলাদেশ।’
নতুন করে জীবন গতি ঠিক করতে অনেক উদ্যোগের দরকার ছিল। উপার্জন করতে হবে, লেখাপড়াও চালাতে হবে। এই সময়েই ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। মিছিলে অংশ নিয়ে তিনি আহত হন। এরপর এমকম প্রথম পর্ব পাস করার পর জামালপুর কলেজে কমার্সের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর জামালপুর থেকে আবার ঢাকায় এসে এমকমে ভর্তি হন। তিনি লিখেছেন, ‘পড়াশুনা করার টাকা পয়সা নাই। সলিমুল্লাহ কলেজের প্রিন্সিপাল কে. পি. ব্যানার্জী, আমার শিক্ষক ছিলেন। আমাকে পার্টটাইম লেকচারার হিসেবে নিযুক্ত করিলেন। পড়াশুনা চলিতে লাগিল, বাড়িতে টাকা পাঠাইতে লাগিলাম।’ এভাবেই শুরু হলো আমাদের পিতা মো. আজগর আলী সাহেবের প্রফেসর জীবন। v
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রফেসর সাহেব