মেট্রোরেল-বিদ্যুৎ– সড়ক–রেলে সেবা বিঘ্নিত হলে টেলিভিশনে স্ক্রল দিতে হবে
Published: 27th, April 2025 GMT
বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেলপথে গ্রাহক কিংবা যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হলে টেলিভিশনে স্ক্রলের মাধ্যমে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এই নির্দেশনা দিয়েছেন।
আজ রোববার এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক নির্দেশনায় জানানো হয়, গতকাল শনিবার মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউট হয়। এই দুটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা কিংবা সংস্থার প্রধানেরা উপদেষ্টাকে জানাননি। উপদেষ্টা এসব বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানতে পারেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, এখন থেকে যেকোনো ধরনের গ্রাহক ও যাত্রীসেবা বিঘ্নের ঘটনা টেলিভিশনে স্ক্রলের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে জানাতে হবে। গ্রাহক ও যাত্রীসেবা আবার চালু হলে, সেটাও জানিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ‘মনে রাখতে হবে, গ্রাহক ও যাত্রীসেবা আমাদের দয়া নয় বরং দায়।’
আরও পড়ুনবৈদ্যুতিক গোলযোগে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ১৮ ঘণ্টা আগেসড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেল ও বিদ্যুৎবিভ্রাটের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তৎপরতা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। পাশাপাশি যাত্রী ও গ্রাহকদের বিষয়টি কেন জানানো হয়নি এবং কেন দুঃখপ্রকাশ করা হয়নি—সেই বিষয়ে কৈফিয়ত চেয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনদেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মেট্রোরেল চলাচল শুরু১৬ ঘণ্টা আগেসড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উপদেষ্টা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায় যে, এটি মেট্রোরেলের কারিগরি ত্রুটি। বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই। এ সময় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপদেষ্টাকে আগে জানাননি। একইভাবে খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়েও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কিছুটা লুকোচুরির আশ্রয় নেন।
আরও পড়ুনদক্ষিণের সেই ১০টি জেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তবে কিছু জায়গায় লোডশেডিং ১১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫