কথায় আছে, ‘পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে’। এ কারণেই কি মরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রাচীন পিঁপড়ার দল? এটা এখনকার নয়, অন্তত ১১ কোটি ৩০ লাখ বছর আগের কথা। তখন যেসব পিঁপড়া পৃথিবীর আলো-বাতাসে চষে বেড়িয়েছে, তাদের ছিল পাখা। আকারেও তারা বেশ বড়সড় ছিল।
 
সম্প্রতি জীবাশ্ম আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রাগৈতিহাসিক পিঁপড়া সম্পর্কে এ রকম নানা তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ জীবাশ্ম ব্রাজিলের জাদুঘরের সংগ্রহে রাখা হয়েছে। সূত্র: সিএনএন।

নতুন গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপাতত এরাই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পিঁপড়ার প্রজাতি। এর আগে যাদের জীবাশ্ম মিলেছে, সেগুলো আরও বহু যুগ পরের।

এ প্রজাতির পিঁপড়ার জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু বিস্ময়কর তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরা ইতোপূর্বে আবিষ্কৃত পিঁপড়াদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। শিকার ধরার জন্য তাদের ছিল ভিন্ন পন্থা। 

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা জাদুঘরের গবেষক অ্যান্ডারসন লেপেকো বলেন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা জাদুঘরে সংরক্ষিত জীবাশ্ম সংগ্রহ পরীক্ষা করার সময় তিনি ‘অসাধারণ’ এ নমুনা দেখতে পান। ওই জাদুঘরে বিশ্বের বৃহত্তম জীবাশ্মযুক্ত পোকামাকড়ের সংগ্রহ রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের ক্রাটো গঠনের নমুনাও রয়েছে। ব্যতিক্রমী জীবাশ্ম সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত এ জাদুঘরটি। 

গত বৃহস্পতিবার কারেন্ট বায়োলজি সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চুনাপাথরে সংরক্ষিত নতুন এ বিলুপ্ত পোকাটি হলো ‘নরক পিঁপড়া’। 

এগুলো হাইডোমাইর্মেসিনা নামক একটি উপপরিবারের সদস্য। ৬ কোটি ৬০ লাখ থেকে ৪ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগে এদের বসবাস ছিল। আজকের জীবিত কোনো পিঁপড়ার সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। 
আবিষ্কৃত এ জীবাশ্মের নাম দেওয়া হয়েছে ভলকানিড্রিস ক্রেটেন্সিস। 

এতে দেখা যায়, ওই প্রজাতির পিঁপড়ার কাস্তের মতো চোয়াল ছিল, যার মাধ্যমে সম্ভবত পিঁপড়া তার শিকারকে ফাঁসিতে ঝোলানোর মতো করে ঝুঁলিয়ে রাখত। গবেষণার প্রধান লেখক লেপেকো বলেন, ‘এ পোকার (পিঁপড়া) মাথার সামনে অদ্ভুত প্রক্ষেপণ দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। অন্য নরক পিঁপড়ার মতো এগুলো নয়।’ 

সাধারণ বিলুপ্ত বড় আকৃতির প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া যায়। কিন্তু পাথরে সংরক্ষিত পোকামাকড়ের জীবাশ্ম পাওয়া বিরল। ক্রিটেসিয়াস যুগের অন্যান্য নরক পিঁপড়া ফ্রান্স ও মিয়ানমারে পাওয়া গেছে। এরা প্রায় ৯ কোটি ৯০ লাখ বছর আগেকার। এর আগে গবেষকরা মনে করতেন, নরক পিঁপড়া কেবল ব্রাজিলেই বাস করত। কিন্তু নতুন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, এরা বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে পুরো গ্রহজুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ দ ঘর নরক প

এছাড়াও পড়ুন:

তেহরান থেকে এক কোটি মানুষ কীভাবে সরে যাবে

ইরানের রাজধানী তেহরান ছাড়ার চেষ্টা করছেন অনেক মানুষ। তবে গত কয়েক দিনের মতোই তেহরানের রাস্তাঘাট এখনো যানজটে ঠাসা।

বিবিসি পার্সিয়ানের প্রতিবেদক ঘোনচে হাবিবিয়াজাদ জানান, তিনি এমন একটি পরিবারকে চেনেন, যারা তেহরান থেকে রওনা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে ১৪ ঘণ্টা পর। অথচ এই যাত্রাপথ সাধারণত তিন ঘণ্টায় শেষ হওয়ার কথা।

এত সময় লাগলেও শেষ পর্যন্ত তেহরান থেকে বেরিয়ে আসতে পারায় পরিবারটি নিজেদের ‘ভাগ্যবান’ মনে করছে।

পরিবারটির সদস্যদের ভাষায়, ‘ভাগ্যক্রমে’ শেষ পর্যন্ত তাঁরা তেহরান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

তেহরানের বাসিন্দাদের আরও অনেকেই এমন কথা বলেছেন। তাঁরা রাজধানী থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। তবে তাঁদের অনেকে আবার উদ্বিগ্ন প্রিয়জনদের নিয়ে, যাঁরা এখনো তেহরান ছাড়তে পারেননি।

বিবিসির এই সাংবাদিক গত রাতে তাঁর এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি তেহরান ছাড়তে পেরেছেন কি না।

জবাবে বন্ধু বলেন, ‘রাস্তা একেবারে আটকে আছে। এখন বেরোলে শুধু যানজটে আটকে থাকতে হবে। আর এই সময়ে তা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’

প্রথমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তেহরানের একটি অংশের বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়তে বলেন। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সবাইকে তেহরান ছেড়ে যেতে হবে।

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার নজিরবিহীন সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। উভয় পক্ষ আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৪ জন।

তেহরানে তখন ভোর সাড়ে চারটা বাজে। তবু বহু মানুষ তখনো জেগে ছিলেন।
সাংবাদিক ঘোনচে হাবিবিয়াজাদ যে ইরানি গ্রুপ চ্যাটগুলোতে আছেন, সব কটিই এখন রূপ নিয়েছে রাজনৈতিক আলোচনার জায়গায়। সঙ্গে কোথায় কোথায় হামলা হচ্ছে, তা জানানোর প্ল্যাটফর্মও হয়ে উঠেছে সেগুলো।

একটি চ্যাট গ্রুপে একজন লিখেছেন, ‘আমি একদম বিধ্বস্ত-শরীরেও, মনেও। টানা চার রাত ঘুমাইনি।’

চ্যাট গ্রুপে আরেকজন জিজ্ঞেস করেছেন, ‘তেহরান থেকে এক কোটি মানুষ কীভাবে সরে যেতে পারে?’

এই প্রশ্নের কোনো উত্তর আসেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ