কুমিল্লার লাকসামে মাদ্রাসাছাত্রী সামিয়া আক্তারের মৃত্যু রহস্য ১১ দিনেও জানতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার ১০ দিন পর গত রোববার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, সে ছাদ লাফিয়ে পড়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

সামিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে গত শনিবার প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন বাবা। সোমবার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনসহ দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে পরিবার। লাকসাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর মা শারমিন বেগম পিবিআইয়ের মাধ্যমে ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

নাঙ্গলকোট উপজেলার নাওগোদা গ্রামের প্রবাসী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সামিয়া আক্তার (১৩)। সে লাকসাম পৌর এলাকার ইকরা মহিলা মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির আবাসিক ছাত্রী ছিল। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৮ এপ্রিল মাদ্রাসার পাশের রাস্তায় আহত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির মালিকানাধীন বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

সেখানে অবস্থা গুরুতর দেখে শিক্ষক খলিলুর রহমান ও মা শারমিন আক্তারসহ সামিয়াকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে একটি হাসপাতালে পরদিন সে মারা যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে, সে মাদ্রাসার পঞ্চম তলার একটি কক্ষে থাকত। ঘটনার দিন রাতে গোসলখানার জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে লাফিয়ে রাস্তায় পড়ে আহত হয়। পথচারীরা দেখে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়।

শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে মেধাবী ছাত্রী ছিল। তাকে অজ্ঞাত কোনো ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করবে কেন? যে জানালার গ্রিল দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার সরু ফাঁকা স্থান দিয়ে মাথা-শরীর বের হওয়ার কথা নয়।’

শারমিন আক্তার আরও বলেন, ‘মেয়েকে মৃত ঘোষণার পর মাদ্রাসার শিক্ষক খলিলুর রহমান কৌশলে পালিয়ে গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ এলাকায় আনার পর জানাজায়ও মাদ্রাসার কেউ অংশ নেননি করেনি, খোঁজখবর নেননি। মাদ্রাসার মুহতামিমসহ অন্যরা পলাতক রয়েছে। পুলিশ ঘটনার পর হত্যা মামলা না নিয়ে নিয়েছে অপমৃত্যুর মামলা। ১০ দিন পর রোববার হত্যা মামলা নিয়েছে।’

নিজাম উদ্দিন শনিবার দেশে ফিরে হত্যারহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। মাদ্রাসার মুহতামিম জামাল উদ্দিন পলাতক থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘ওই ছাত্রী আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পঞ্চম তলার জানালার গ্রিল দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন মারা যায়। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কোনো দায় নেই।’

লাকসাম থানার ওসি নাজনিন সুলতানা বলেন, এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হলেও ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যা মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে পুলিশ। মৃত্যুর রহস্য বের করার চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য রহস য

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ