ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
Published: 30th, April 2025 GMT
আট বছর ধরে গাড়ি চালানোর পেশায় আছেন মো. শাহীন। প্রথমে চালাতেন ট্রাক, এখন যাত্রীবাহী বাস। তবে এটা তার মূল কারবারের আড়াল মাত্র। বাস চালানোর আড়ালে তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনেন ইয়াবার বড় চালান। প্রতি চালানে ১০–২০ হাজার পিস ইয়াবা থাকে। এগুলো পৌঁছানোর বিনিময়ে তিনি পান মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ছয়টি চালান এনে তিনি অন্তত ছয় লাখ টাকা পান। ফলে লাভজনক এ কারবারে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকা থেকে বাসচালক শাহীন ও সুপারভাইজার সঞ্জিত রাজবংশীকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ওই সময় বাসটিতে তল্লাশি চালিয়ে ১৫ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। এই চালানটি ঢাকার গাবতলী এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে।
ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ জানান, আন্তঃজেলা বাসের চালক–হেলপারদের একটি অংশ মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বিভিন্ন রুটের পরিবহনকর্মীদের মাদকসংশ্লিষ্টতার তথ্য পেতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরপর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস পূর্ব রামপুরার মোল্লা টাওয়ারের সামনে থামানো হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে চালক ও সুপারভাইজার স্বীকার করেন, তাদের কাছে মাদকদ্রব্য আছে। এরপর তাদের দেখানো অনুযায়ী চালকের আসনের নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন ডিএনসি ধানমন্ডি সার্কেলের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, শাহীনের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই বছর ধরে তিনি বাসে মাদক পরিবহনের কাজ করেন। এর আগে ট্রাক চালানোর সময় অন্য চালকদের মাধ্যমে এ কারবারের বিষয়ে জানতে পারেন। পরে টেকনাফের মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি প্রতি ১০ হাজার পিস ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আনুমানিক এক লাখ টাকা করে পান। এবারের চালানের জন্য পেতেন দেড় লাখের কিছু বেশি। তবে পৌঁছানোর আগেই তিনি ও তার সহযোগী ধরা পড়েন।
অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইয়াবার চালানের প্রেরক ও প্রাপকসহ আরও কয়েকজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।
গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’
এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’
সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।
গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।
আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’
ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।