বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো চুক্তি না করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইগনোর (অবজ্ঞা) করে, অবহেলা করে, জনগণকে অবহেলা করে এমন কোনো চুক্তি করবেন না, যেই চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহান মে দিবসে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এই সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাস করছি। আমাদের একটা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে। আমরা একটা ভয়াবহ ফ্যাসিস্টকে দেশ থেকে তাড়িয়েছি। আমরা ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটাতে পারিনি। এখন পর্যন্ত আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা, জনগণের ভোটের মাধ্যমে আমাদের সরকার গঠন করব, পার্লামেন্ট (সংসদ) গঠন করব, সেটা কিন্তু এখনো গঠন করতে পারিনি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সবার কাছে শ্রদ্ধেয়। তাঁর কাছে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।

সংস্কার বিএনপির ‘সন্তান’—এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যখন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ সাধারণ মানুষের ওপর চেপে বসেছিল, তখন তারেক রহমান রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে ৩১ দফা দিয়েছিলেন। যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেগুলোতে একমত হবে না, তা পরবর্তী পার্লামেন্টে পাস করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশের অস্তিত্ব গণতন্ত্রের উত্তরণের ওপর নির্ভর করছে বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ।

শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। সঞ্চালক ছিলেন শ্রমিক দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম। রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকেও বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী এই সমাবেশে অংশ নেন।

আরও পড়ুনকরিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে: তারেক রহমান৪১ মিনিট আগেআরও পড়ুন১৭ বছর গাছের গোড়ায় পানি দিয়েছি আমরা, আর ফল খেয়েছেন আপনারা: মির্জা আব্বাস২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব এনপ র র জন ত ক ফখর ল

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।

তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ