প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, মালয়েশিয়ায় লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেওয়ং। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেলে তাঁর ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা। গত ১৩ মে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা করতে আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল দেশটি সফরে গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কর্মী পাঠাতে পারে, সেই সুযোগ করে দিতে দেশটিকে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা এটি ভালোভাবে বিবেচনা করে দেখবেন এবং অচিরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভিডিও বার্তায় বলেন, প্রথম দফায় ৭ হাজার ৯২৬ জন কর্মীকে নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ দেওয়া হবে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তাকর্মী, নার্স, কেয়ারগিভারসহ দক্ষ কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা আশাবাদী। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় এটা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। যারা মালয়েশিয়ায় আসতে চান, তাঁদের জন্য সত্যিকারের কল্যাণকর কিছু করাই সরকারের লক্ষ্য।

আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকেরা সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা পান। তাদের যেন অন্য দেশের শ্রমিকের মতো মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হয়, সে অনুরোধ দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে করা হয়েছে। এটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে তাৎক্ষণিকভাবে তার সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ভিডিও বার্তায় আরও জানানো হয়, বাংলাদেশি যেসব শ্রমিক অবৈধ হয়ে গেছেন, তাদের বৈধ করে দিতে বৈঠকে অনুরোধ করেছেন প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা। এর জবাবে তারা বলেছেন, এটা মাঝেমধ্যে করা হয়; সর্বশেষ গত বছর করা হয়েছিল। তবে যাদের ভিসার মেয়াদ নেই, তাদের ক্ষেত্রে এটা করা যায় না। তাদেরও বিবেচনায় নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অনেক সময় নিয়োগকর্তার কারণে শ্রমিকেরা ভিসা নবায়ন করতে পারেন না। তারা এটা বিবেচনা করে দেখবেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট অন র ধ

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নিয়মিত সভা করে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির জোগান ও ব্যাংকের মূলধন কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে রূপরেখা তৈরি করে বাস্তবায়ন করতে হবে। মূলধন জোগান দেওয়া ছাড়া শুধু সংকটে পড়া ব্যাংক নয়, ভালো ব্যাংকগুলোকেও ভুগতে হতে পারে।

‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুনরুদ্ধার: মূলধন এখন কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন অভিমত উঠে আসে। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ব্যাংকার, পুঁজিবাজারের অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ।

বক্তারা বলেন, ব্যাংকে পর্যাপ্ত মূলধন হলো আর্থিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি, যা আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়, তারল্য বজায় রাখে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা টিকিয়ে রাখে।

এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের জাতীয় বিনিয়োগ কৌশল নেই। ফলে বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান হচ্ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোও বিভিন্ন বাধা তৈরি করে রেখেছে। এসব দূর করা জরুরি। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বন্ধ করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলতে হবে। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী নতুন পথের সন্ধান করতে হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য মূলধন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বল পরিচালন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসছে। আগে যে ভুল হয়েছে, তা শোধরাতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসান ও. রশিদ বলেন, ব্যাংকের শেয়ারধারণে ২ শতাংশ কোনো ইস্যু নয়। সমস্যা হলো সুশাসন ছিল না। একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবার থেকে একজনের বেশি পরিচালক না দিলেই হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা দরকার। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে আর বন্ড নয়, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে এক টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।

আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে যে শীতল যুদ্ধ চলে, তার অবসান হওয়া দরকার। এনআই অ্যাক্টে মামলা হলে শুনানির তারিখ পেতে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ আদায়ে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাংকের মূলধনে বাড়াতে দেশের পাশাপাশি বিদেশি তহবিলের দিকেও নজর দিতে হবে। বিদেশ থেকে এখনো কম খরচে তহবিল পাওয়া সম্ভব। এ জন্য সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।

সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগে অনেক ভালো নিয়মকানুন ছিল। আমরা ধীরে ধীরে তা থেকে সরে এসেছি। সুদের হারে ৬/৯–এর মতো তত্ত্ব চালু করে আমরা সারা বিশ্বকে শিখিয়েছি। এর প্রতিদান এখন আমরা পাচ্ছি। এ জন্য আন্তর্জাতিক চর্চা মেনে চলতে হবে। যেসব ব্যাংকে মূলধন জোগান দিয়েও ঠিক করা যাবে না, সেগুলোতে টাকা ঢালা ঠিক হবে না। যেসব ব্যাংক ঠিক হওয়া সম্ভব সেগুলোর এবং ভালো ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়াতে হবে।’ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধার কারণ দেশে নতুন আর্থিক পণ্য চালু করা যায় না বলে জানান তিনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, মূলধন বাড়াতে সরকারের গ্যারান্টি–নির্ভর বন্ড চালু করতে হবে। তবে দেশের মানুষের বন্ডে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা ভালো না। ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া বন্ডের টাকা এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি। ব্যাংকগুলোর বন্ড এখন ক্লাব নির্ভর হয়ে গেছে। এক ব্যাংকের বন্ড অন্য ব্যাংক কিনছে। বন্ডে বিনিয়োগে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তাদের কিনতে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এ এফ নেছারউদ্দিন বলেন, ব্যাংক খাতে এই দুরবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক একীভূতকরণই যথেষ্ট নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হওয়াটা নিশ্চিত করতে সময়োপযোগী সংস্কার, স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ, স্বতন্ত্র মূল্যায়ন এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য মূলধন পুনর্গঠন কাঠামো দরকার।

সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন বলেন, ধীর আইনি প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীদের শক্তিশালী আস্থা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকরী বাণিজ্যিক আদালত দরকার। যারা অর্থ তছরুপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দেওয়া হচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও খেলাপির মামলা দিয়ে শেয়ার বাজেয়াপ্ত করলে কিছুটা ফলাফল পাওয়া যেত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ