বিএনপির সমাবেশ হলেই ধান দিয়ে তৈরি পোশাক পরে ছুটে যান ইউনুচ
Published: 17th, May 2025 GMT
তীব্র গরমে ঘামে ভিজে গেছে শরীর। এর মধ্যে সারা শরীরে ধান দিয়ে তৈরি পোশাক পরে স্লোগান দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। তাকে ঘিরে আছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ফেসবুকে লাইভ করছেন। উৎসাহের কমতি নেই কারও। ধানের তৈরি পোশাক পরা ব্যক্তির নাম ইউনুচ হাওলাদার। বাড়ি পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলায়।
খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে যোগ দিতে আজ শনিবার সকালে খুলনায় এসেছেন তিনি। দুপুর ১২টায় ধানের শীষ তৈরি পোশাক জড়িয়ে হাজির হয়েছেন সমাবেশস্থলে।
ইউনুচ হাওলাদার সমকালকে জানান, গতবছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ পর্যন্ত ২০টি সমাবেশে ধানের তৈরি পোশাক গায়ে যোগ দিয়েছেন। গরমে কষ্ট হলেও নেতাকর্মীদের উৎসাহ দেখে আনন্দ পান তিনি।
২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত রাজধানীর শ্যামনগর থানা শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন ইউনুচ। ৬ মামলা মাথায় নিয়ে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী চলে যান। সেখানে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চলে তার। তবে তার আগ্রহ বিএনপির রাজনীতি করা। দেশের যে কোনো জেলায় বড় সমাবেশ হলেই দেখা মেলে তার। ধানের শীষ কেটে কেটে তিনি নিজেই এই পোশাক তৈরি করেছেন।
সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনুচ হাওলাদারকে ঘিরে আছেন নেতাকর্মীরা। সবাই ছবি ও সেলফি তোলায় ব্যস্ত। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের কনটেন্ট ক্রিয়েটর, সংবাদকর্মীদেরও আগ্রহের কেন্দ্রে তিনি।
ইউনুচ হাওলাদার জানান, দলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি বড় সমাবেশগুলোতে এভাবে সাজেন। সমাবেশের জেলায় আসা-যাওয়া এবং পোশাকের খরচ তিনি নিজেই বহন করেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে মামলা খেয়েছি, ঢাকা থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যেতে হয়েছে। সেখানেও স্থানীয়রা নির্যাতন করেছে। পালিয়ে অনেক রাত ধানক্ষেতে কাটিয়েছি। এখন দলের দুঃসময় কেটে গেছে। ভালোবাসা থেকেই সমাবেশ হলেই ছুটে যাই।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ত র ণ য র সম ব শ ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
জরুরি সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে: সালাহউদ্দিন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন, আবার আপনি সরে গেলেন, আপনি মনে করছেন আপনাকে জনগণ অসীম ক্ষমতাশীল বানিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো পরামর্শ আপনার মানার দরকার নেই। যদি তাই মনে করেন আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে, ইতোমধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে উচ্চাভিলাস প্রকাশ করছে। তাদের উদ্দেশ্য অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অনির্বাচিতভাবে যেন এই সরকার থাকতে পারে। আপনার কী উদ্দেশ্য তা অবশ্য আমরা জানি না।
শনিবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যদি কোনোদিন নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারকে ঘেরাও করতে হয়, তা হবে আমাদের জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্য। আপনি কি (প্রধান উপদেষ্টা) চান এই নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক। এ দেশের জনগণ জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক।
হুঁশিয়ারি দিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি সম্মানের সঙ্গে ডিসেম্বরের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করুন। সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া, তা চালু থাকবে যারাই সরকারে আসুক না কেন। অনন্তকাল ধরে আপনি বিচার এবং সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্ঠকাকীর্ণ করবেন না। যাদের পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করুন। আমরা আগেও বলেছিলাম আপনার উপদেষ্টা
পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে, আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। এখন কিছু বিদেশিদের দোসর আছে। এখন আমরা তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছে, যারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নেই, তাদেরকে অপসারণ করুন। না হলে সসম্মানে বিদায় নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনার নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের পরে সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবো। এখন মানুষ বলছে, আপনার সরকার এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির ২ জন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, তারা আবার এনসিপি সংগঠন করে। যদিও অফিসিয়ালি করেন না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে, ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান তাহলে এনসিপি মার্কা ২ জনকে পদত্যাগ করতে বলুন, যদি পদত্যাগ না করে আপনি বিদায় করুন।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে, এটা কীভাবে ভাবলেন? তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত ‘অ্যারোগ্যান্টলি’ আপনার সেই উপদেষ্টা বলছেন তাতে নাকি কিছু যায় আসে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা দাবি করছি- সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয় নিজে পদত্যাগ করবে, না হয় আপনি তাকে বিদায় করবেন। এই দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য, আমরা তা হতে দেব না। এই দেশে বন্দর- করিডোর সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে, বিদেশে আপনি কী কন্ট্রাক্ট করে এসেছেন জানি না। আপনি কি চুক্তি করে এসেছেন অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর, করিডোর সব বিদেশিদের হাতে হস্তান্তর করবেন? আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন করা।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চলনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।