পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের নামে থাকা আরও নয়টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, এসব ফ্ল্যাট রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট ও বসুন্ধরা এলাকায় অবস্থিত।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামে থাকা ২২টি ফ্ল্যাট, ২টি বাড়িসহ সব প্লট ও জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত।

দুদক ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের নয়টি ফ্ল্যাট আজ জব্দের আবেদন করে দুদক। শুনানি নিয়ে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

আদালতে জমা দেওয়া দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের নামে রাজধানীর গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। গুলশান-২–এ রয়েছে ২০ তলাবিশিষ্ট একটি বাড়ি। এর বাইরে পূর্বাচলে সাড়ে সাত কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর ও বাড্ডায় তাঁর ২৫ কাঠার জমি রয়েছে।

চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদের নামে রাজধানীতে পাঁচটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাড়ে সাত কাঠা জমির ওপর চারতলা একটি বাড়িও রয়েছে তাঁর। এর বাইরে তাঁর নামে আরও ১৩ কাঠা জমির সন্ধান পেয়েছে দুদক।

এ ছাড়া চৌধুরী নাফিস ও আঞ্জুমান আরার ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সরাফতের নামে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকা সাতটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুনচৌধুরী নাফিজ সরাফাত: রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যাঁর উত্থান৩১ আগস্ট ২০২৪

দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৮৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

এ ছাড়া এই চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি অর্জন করা হয়েছে বলে দুদক জানতে পেরেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য

এছাড়াও পড়ুন:

শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর-১৭১) স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ লোপাটসহ বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে ব্রোকারেজ হাউজটির স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

মিউচুয়াল ফান্ড-পাবলিক ইস্যু রুলসের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা

ডিএসইতে সূচকের উত্থান, সিএসইতে পতন

সম্প্রতি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া নিবন্ধন সনদ বাতিলের বিষয়টি শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও অবহিত করা হয়েছে।

এর আগেও ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ৭০০তম কমিশন সভায় শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির ডিপি সনদ স্থগিত করা হয়। ডিপি সনদ স্থগিত করা হয়। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির সমন্বিত গ্রহক হিসাবে ঘাটতি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুর কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

অভিযোগ
২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে ডিএসইর সদস্যভুক্ত ১৮৬টি ব্রোকারেজ হাউজের দাখিল করা নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিএসইসি। এতে ১৮টি ব্রোকারেজ হাউজ তাদের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের অর্থ আইন বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঘাটতি পাওয়া গেছে।

পরবর্তীতে ২০২০ সালের পর থেকে মশিহর সিকিউরিটিজ, তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, বানকো সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ডন সিকিউরিটিজ, ইনডিকেট সিকিউরিটিজ, সাদ সিকিউরিটিজ ও শাহ মোহাম্মদ সগির থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতি ঘটে।

ওই সময়ই সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে রক্ষিত বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঘাটতির জন্য শাহ মোহাম্মদ সগীরের তৎকালীন পরিচালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর না করা পর্যন্ত ডিএসইর শেয়ারে তাদের ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্জিত ও স্থগিত মুনাফা সংরক্ষণ করে রাখে দেওয়া হয়।

এরপর ২০২২ সালে ২২ মার্চ বিএসইসির জারিকৃত নির্দেশনায়ে ডিএসই ও সিএসই সব ব্রোকারেজ হাউজ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তদন্ত সাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এরপর থেকে অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ টাকা সমন্বয় করে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অন্যতম।

এর আগে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পূরণ, শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রির প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করা, সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ওপর প্রচলিত ব্যাংক রেটে চার বছরের সুদ আদায় করে গ্রাহকদের হিসেবে যথাযথভাবে জমাকরণ সাপেক্ষে শাহ মোহাম্মদ সগীরের কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। আর এ কাজটি তদারকির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিএসইকে। তখন ডিএসই বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অর্থিক অবস্থাসহ সমন্বিত গ্রাহকদের হিসাবে আরো সিকিউরিটিজ (শেয়ার) ঘাটতি যাচাই-বাছাই করে সম্প্রতি স্ট্যাটাস রিপোর্ট দাখিল করে। ওই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে দ্রুত ব্রোকারেজ হাউজটির কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছিল বিএসইসি।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত
শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুলস ৬(১), ৬(২) ও ৭(৩), সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১১, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর দ্বিতীয় তফসিলের আচরণ বিধি ১, ডিপজিটরি (ব্যাবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর প্রবিধান ৩৪ (১) ও (২) লঙ্ঘন করেছে। তাই ওই বিষয়ে ওপর আলোচনা ও সার্বিক বিবেচনাপূর্বক শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেডের স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ এবং স্টক ব্রোকার নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উপযুক্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই স্টক ডিলার ও স্টক ব্রোকার নিবন্ধন সনদসমূহ (সনদ নম্বর নিবন্ধন-৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০৯/৩৪৭: ২১.০৬.২০০৯ এবং নিবন্ধন-৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০২/৬৪: ০৫.০৫.২০০২) বাতিল করা হলো। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ডিএসইকে অনুরোধ করা হলো।

২০২২ সালের জানুযারি থেকে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির সব দায়-দেনাসহ শতভাগ মালিকানা কিনে নিয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ। ওই সময় ব্রোকারেজ হাউজটির কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল এ শিল্পগোষ্ঠী। সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বিনিয়োগকারীদের অর্থ সমন্বয়সহ আরো বেশ কিছু শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে বোকারেজ হাউজটি প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর সে সময় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও চেক প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ আত্মসাৎ ও চেক প্রত্যাখ্যানসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মহসিনকে কারাগারে পাঠান চট্টগ্রামের দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ। তার বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের (এনবিএল) আগ্রাবাদ শাখার পক্ষ থেকে পাঁচটি চেক প্রত্যাখ্যান মামলা ছিল ২০২০ ও ২০২২ সাল থেকে। ৫ মামলায় মোট টাকার পাওনা দাবির পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা। এই ৫ মামলার প্রতিটিতে এক বছর করে মোট ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।

এদিকে, গত ১৫ মে করোনাকালীন সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৪০৪ কোটি টাকা উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সাদ মুসা গ্রুপের কর্ণধার মুহম্মদ মোহসিনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ