যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ কিনে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান রেডবার্ড ক্যাপিটাল পার্টনার্স। শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা নিজেদের মধ্যে বিক্রি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। টেলিগ্রাফ মিডিয়া গ্রুপের মালিকানা কিনতে ৫০ কোটি পাউন্ড বা ৬৭ কেটি ডলার মূল্যের চুক্তিতে সম্মত হয়েছে তারা। ১৭০ বছরের পুরোনো এই সংবাদমাধ্যমের মুদ্রণ ও অনলাইন সংস্করণের মালিকানা ছিল টিএমজি গ্রুপের।
ডেইলি টেলিগ্রাফ, জনপ্রিয়তার জন্য ‘টোরিগ্রাফ’ নামেও পরিচিত, এটি ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির ঘনিষ্ঠ বলেও মনে করা হয়। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টেলিগ্রাফ মিডিয়া গ্রুপ (টিএমজি) কেনার জন্য রেডবার্ড ‘নীতিগতভাবে সম্মত’ হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে টেলিগ্রাফ বিক্রির প্রক্রিয়া চলছিল। এক পর্যায়ে যুক্তরাজ্যের আগের রক্ষণশীল সরকার সেই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান রেডবার্ডে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের (ইউএই) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ইনভেস্টমেন্টসের (আইএমআই) বিনিয়োগ রয়েছে।
টিএমজি কেনার জন্য ২০২৩ সালের শেষ দিকে রেডবার্ড-আইএমআই একটি চুক্তি করেছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের আগের সরকারের আপত্তির কারণে তা আটকে গিয়েছিল। আগের যুক্তরাজ্য সরকারের আপত্তি ছিল, আইএমআই আবুধাবিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে সংবাদমাধ্যমের বাক্স্বাধীনতা নেই। তাই তাদের কাছে টেলিগ্রাফ বিক্রি হলে ঐতিহ্যবাহী সংবাদমাধ্যমটির মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে। এ অভিযোগের কারণে সংবাদমাধ্যমটি আবার বিক্রির দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন যুক্তরাজ্য সরকার।
শুক্রবার রেডবার্ড ক্যাপিটাল পার্টনার্স জানায়, টিএমজির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে তারা এখন দ্য টেলিগ্রাফের ‘একক নিয়ন্ত্রণকারী মালিকে’ পরিণত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ১৮৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমটির জন্য ‘উন্নতির নতুন যুগের’ দরজা খুলে গেছে।
রেডবার্ড জানিয়েছে, তারা দ্য টেলিগ্রাফকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারণের চেষ্টা করবে। সংবাদমাধ্যমটির সম্প্রসারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডিজিটাল কার্যক্রম, সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং সাংবাদিকতায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তারা যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাছাই করা ছোট অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করছে, যারা ছাপা পত্রিকায় দক্ষ এবং দ্য টেলিগ্রাফের সম্পাদকীয় মূল্যবোধ রক্ষায় দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র স ব দপত র র জন য ট এমজ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।
‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।
এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।